নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘একটি দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। এই দায়িত্ব আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব। কমিশনের অপর সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁদের নিয়ে বসে কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করব।’
নিয়োগ পাওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় আজ শনিবার(২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় তিনি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।
নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইব। নির্বাচন বিষয়টি আপেক্ষিক। সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। আর সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।’
মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নানা পদ পেরিয়ে সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পাঁচ বছর বাদে এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।
শনিবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ত্রয়োদশ সিইসি হিসেবে হাবিবুল আউয়ালকে নিয়োগ দেন। আর তার নেতৃত্বেই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালিত হবে।
৬৬ বছর বয়সী হাবিবুল আউয়াল পাঁচ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি।
সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি সিইসির সঙ্গে আরও চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান।
হাবিবুল আউয়ালের পৈত্রিক ভিটা চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দীপে হলেও তার জন্ম কুমিল্লায়, বাবার চাকরি সূত্রে।
হাবিবুল আউয়ালের বাবা কাজী আবদুল আউয়াল কারা বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বাদী ছিলেন তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) আবদুল আউয়াল।
হাবিবুল আউয়াল ১৯৭২ সালে খুলনার সেন্ট জোসেফ’স হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।
বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি শুরু করেন মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হন হাবিবুল আউয়াল। ২০০৪ সালে হন অতিরিক্ত সচিব। ২০০৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন তিনি। সচিব হওয়ার পর ২০০৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়েই ছিলেন হাবিবুল আউয়াল।
বিচার বিভাগের এই কর্মকর্তার আইন সচিব হিসেবে নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালে রায় দেয় আদালত। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগের সময় নীতিমালা মানা না হওয়ায় আদালত তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে।
আইন সচিব থাকা অবস্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে দুই বিচারককে অবসরে পাঠানো নিয়েও জটিলতায় জড়িয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল। সংসদীয় কমিটি এজন্য তাকে তলব করলে তিনি ওই ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমাও চান।
ওই সব ঘটনার পর ২০১০ সালে এপ্রিলে ধর্ম সচিব করা হয় হাবিবুল আউয়ালকে। পরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব করা হয়।
২০১৪ সালে সেখান থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব করে পাঠানো হয় তাকে। ওই বছরই পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন তিনি।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল হাবিবুল আউয়ালের। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।
২০১৬ সালে আরও এক বছর বাড়ানো হয় চুক্তির মেয়াদ। এরপর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেই জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি।
তিন মেয়ের জনক হাবিবুল আউয়ালের স্ত্রীর নাম সাহানা আক্তার খানম। তার আত্মজীবনীমূলক একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই