সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এপ্রিলের প্রথম দিনে বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে মৌয়ালরা মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সুন্দরবনে মৌয়ালদের প্রবেশাধিকার বা পাশ দেয়া উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বেলা দশটায় শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন অফিসে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার পরপরই মৌয়ালদের হাতে মধু সংগ্রহের পাশ তুলে দেয়া হয়।
বুড়িগোয়ালীনি ষ্টেশন অফিসার সুলতান হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নির্দেশণামুলক বক্তব্যের পর মৌয়ালদের হাতে ‘পাশ’ তুলে দেন পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এম এ হাসান।
সহকারী বন সংরক্ষক এমএ হাসান জানান, প্রতি বছর ১ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে মৌয়ালদের হাতে পাশ উঠিয়ে দেয়ার রীতি থাকলেও করোনা মহামারীর কারনে এবছর তা হচ্ছে না। মৌয়ালদের হাতে অনুমতি দেয়ার পর তারা মধু সংগ্রহে বনে প্রবেশ করবে। এবছর ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু এবং ২ শত ৬৫ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবনের চারটি ষ্টেশন থেকে প্রথম পর্যায়ে দুই শতাধিক মৌয়াল দল পাশ বা অনুমতিপত্র গ্রহণ করবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এদিকে আজ থেকে মৌয়াল দলগুলো সুন্দরবনে প্রবেশ করলেও এবার আশানুরুপ মধু পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে মৌয়ালদের। মুলত আগাম বৃষ্টি না হওয়ার পাশাপাশি চোরাইভাবে এ বছর দেদারছে মধু সংগ্রহের কারণে ‘চালান’ বাঁচানো নিয়ে তারা রীতিমত শংকায় পড়ার কথা জানিয়েছেন।
প্রতিবার মধু নিয়ে ফেরার পথে ‘পাশ’ সারেন্ডারের সময় বনবিভাগকে কিছু কিছু মধু দিতে হয়। এবছরও একই অবস্থা হলে মৌয়াল দলগুলো খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। – মৌয়াল দলের সদস্য
মৌয়ালদের অভিযোগ, এলাকায় কাজ না থাকার সুযোগে এবছর মাছ কাঁকড়া শিকারের আড়ালে অনেক বনজীবি সুন্দরবনে যেয়ে চোরাইভাবে মধু কেটেছে। এসব চোরাই মৌয়ালদের কারনে প্রায় সবগুলো চাক ইতিমধ্যে দু’একবার কাটা পড়েছে। তাই ধরণা করা হচ্ছে বিগত বছরগুলোর তুলনায় মধু অনেক কম জুটবে। তারপরও বাপ-দাদার পেশা মেনে আর পরিবারের সারা বছরের ভরণ পোষন যোগাতে বাধ্য হয়ে বনে যেতে হচ্ছে তাদের।
শ্যামনগরের সোরা গ্রামের মোসলেম উদ্দীন ও আবুল হোসেন এবং কদমতলা গ্রামের আলম গাজী জানান, প্রতি বছর প্রথম পনের দিনে বার থেকে পনের মণেরও অধিক মধু পাওয়া যেত। কিন্তু এবছর বৃষ্টি না হওয়ায় চাক-এ মধুর পরিমান তুলনামুলকভাবে কম থাকার সম্ভবনা। তাদের প্রতিটি দলে সাত থেকে নয় জন পর্যন্ত সদস্য থাকে। প্রথম পর্যায়ে তারা পনের দিন সুন্দরবনে অবস্থান করে সংগৃহীত মধু ও মোম নিয়ে লোকালয়ে ফিরে পুনরায় সুন্দরবনে প্রবেশ করে দ্বিতীয় বারের মত। এভাবে টানা দু’মাস মৌয়াল দলগুলো সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক মৌয়াল দলের সদস্য জানায়, প্রতিবার মধু নিয়ে ফেরার পথে ‘পাশ’ সারেন্ডারের সময় বনবিভাগকে কিছু কিছু মধু দিতে হয়। এবছরও একই অবস্থা হলে মৌয়াল দলগুলো খুব বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এদিকে গত কয়েক বছর সুন্দরবনে বাঘের উপদ্রব না থাকায় মৌয়াল দলগুলো অনেকটা নির্বিঘ্নে মধু সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু এবছর গোলপাতা মৌসুমের শেষ দিকে পশ্চিম সুন্দরবনের পায়রাটুনি এলাকায় বাঘের আক্রমণে এক বনজীবি নিহতের ঘটনায় সুন্দরবনে ঢুকতে প্রস্তুত মৌয়ালদলের সদস্যরা কিছুটা আতংকে রয়েছে বলে জানিয়েছে।
নীলডুমুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম, পানখালীর জহিরুল ইসলাম ও কালিঞ্চির মনোরঞ্জন মন্ডল জানায়, বনদ্যুদের সাথে সাথে বাঘের ভয় গত কয়েক বছরে কমলেও এবছর আবারও বনে মানুষ পড়েছে। তারপরও মধু সংগ্রহ পেশা বিধায় সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে বনে যাচ্ছে সবাই।
খুলনা গেজেট/ টি আই