বাঘ সংরক্ষণে গত দুই দশকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আসেনি সাফল্য। বাঘের সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। তবে এবার এসেছে সুখবর। সর্বশেষ শুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
সুন্দরবনের বাঘশুমারির চূড়ান্ত ফল আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বন বিভাগের জরিপকারী দলটি বলছে, সাধারণত সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অংশে সব সময়ই বাঘ বেশি দেখা যায়। এবার সেখানেও গতবারের চেয়ে বেশি বাঘ দেখা গেছে। শিশু বাঘের সংখ্যাও গতবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামগ্রিকভাবে গতবারের চেয়ে এবার বাঘের সংখ্যা ২০-৩০ শতাংশ বাড়তে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার গৃহীত প্রকল্পগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দেশে বাঘ সংরক্ষণে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। তার বিপরীতে দেশে ২০১৮ সালে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা কমে ১১৪টি হয়। যদিও বাঘ রক্ষার নানা উদ্যোগ গ্রহণের আগে ২০০৪ সালে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি।
সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বনের মধ্যে ১ হাজার ২০০-এর বেশি ক্যামেরা ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাঘের ছবি তোলা শুরু হয়; শেষ হয় গত মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয় তিন কোটি ২৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলাকে মোট চারটি এলাকায় ভাগ করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বাঘের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। সামগ্রিক সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার কারণে সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। জরিপে দেখা গেছে, বনে বাঘের প্রধান শিকার চিত্রাহরিণ ও বন্যশূকরের সংখ্যাও বেড়েছে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ বাঘ সংরক্ষণে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে, তাতে ইতিবাচক ফলাফলের পাশাপাশি বাঘের সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ হওয়ার কথা ছিল। দাতা ও সরকারি সংস্থার মধ্যে দুর্বল সমন্বয়, সংরক্ষণ ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, অদক্ষ-অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে কার্যকরী সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী আইনজীবী মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, তিন বছর অন্তর বাঘ গণনার নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দে বড় ধরনের অর্থ অপচয় ও লুটপাট হচ্ছে। অন্তত ১০ বছর পর পর গণনা করলেও সুন্দরবনের ওপর চাপ কমবে।
খুলনা গেজেট/এইচ