পূর্ব সুন্দবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রজনন মৌসুমে দেদারসে চলছে মা কাঁকড়া নিধন। জেলেরা কতিপয় অসাধু বনকর্মীদের যোগসাজশে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অবৈধভাবে আহরণ করছে মা কাঁকড়া। ফলে রপ্তানিযোগ্য শিলা কাঁকড়া সহ বিভিন্ন ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন ব্যহত হবার পাশাপাশি অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১ জানুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাঁকড়া আহরণ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করে বনবিভাগ। শিলা কাঁকড়ার প্রধান উৎস সুন্দরবন। এখানে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। অধিক লাভের আশায় বন সংলগ্ন দাদন ব্যবসায়ীরা মাছের পাশের (অনুমতি) আড়ালে জেলেদের দিয়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রায় ২৫০টি ছোট-বড় খাল থেকে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখা শিলা কাঁকড়া নিধন করছে এবং এতে বনবিভাগের কর্তা ব্যক্তিদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, পূর্ব সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জ কার্য্যালয়ের সম্মুখে স্থানীয় শরনখোলা বাজারের ব্যবসায়ী রিপন রয়াতী, ডালিম আকন, আলতাফ মাতুব্বর, ইসমাইল হাওলাদার, ডালিম মুন্সী, মিজান খাঁন, জামাল গাজী, নুরু হাওলাদার, ফরিদ খাঁন, ফেরদৌস খাঁন এবং চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ি এলাকায় রফিকুল হাওলাদার, কালাম মুন্সী ও কালু সহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী প্রতিদিন সুন্দরবনের ১৫/২০ মন কাঁকড়া ক্রয় বিক্রয় করলেও বনরক্ষীরা দেখেও না দেখার ভান করছে।
অন্যদিকে, কাঁকড়া আহরন নিষিদ্ধ মৌসুমে শুটকি পল্লী দুবলা টহল ফাঁড়ির (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র রায় রামপাল ও মোংলা এলাকার প্রায় অর্ধশত জেলেদের কাছ থেকে গোন প্রতি (১৫দিনে) দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চর, আলোরকোল, মেহের আলী, নারিকেলবাড়িয়া সহ বিভিন্ন এলাকা হতে কাঁকড়া আহরণে জেলেদের সহায়তা করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলেরা জানান।
জানতে চাইলে দুবলা ফাঁড়ির কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে মাছ ধরার জন্য চরপাটা ও গুড়ি জালের পাশ থাকলেও কাঁকড়ার পাশ বন্ধ রয়েছে। তবে, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।
শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিনয় কুমার রায় বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া নিধন পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে উৎপাদন চরম ভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কাঁকড়ার প্রজনন সহ প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরী।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) সামছুল আরেফিন জানান, বর্তমানে কাঁকড়া আহরণ ও বিপনন নিষিদ্ধ। গোপনে অন্য পাশ নিয়ে যদি কেউ কাঁকড়া ধরে ও বিক্রি করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা সহ টহল জোরদার করা হচ্ছে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণের অনুমতি নাই। তবে, এ ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।