বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানিবৃদ্ধি পেয়ে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে বনের বিভিন্ন এলাকা অন্তত তিনফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়।
এদিকে জোয়ারের পানির স্রোতের তোড়ে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বিশেষ করে মায়াবী চিত্রা হরিণের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্রোতের তোড়ে ভেসে যাওয়া হরিণ উদ্ধারও করা হয়েছে।
সুন্দরবনের সাগর পাড়ের দুবলার চর জেলে পল্লি টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরেস্ট রেঞ্জার খলিলুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকালে নিম্নচাপের প্রভাবে বনের সাগর সংলগ্ন এলাকা জলোচ্ছ্বাসে অন্তত তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী বিশেষ করে হরিণের দল প্রাণ বাঁচাতে বনের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উচু জায়গায় আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে জোয়ারের স্রোতের তোড়ে কিছু হরিণ পানিতে ভেসে যায়।
তিনি আরও জানান, পানির তোড়ে শ্যালার চর ফরেস্ট ক্যাম্প অফিসসংলগ্ন এলাকায় পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় সেখানকার বনকর্মীরা একটি হরিণের বাচ্চাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। সুস্থ্য হওয়ার পর এটিকে বনে ছেড়ে দেওয়া হবে। অপরদিকে দুবলার চর অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, হরিণটি জোয়ারের পানিতে আটকে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে। পরে হরিণের মরদেহটি মাটিচাপা দেওয়া হয়।
বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদী ও মোংলা নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। মোংলার নদ-নদীগুলোতে হঠাৎ করেই পানি বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট।
জানা গেছে, গোটা বনাঞ্চল জুড়ে দুই থেকে আড়াই ফুট পানির ঢেউ আছড়ে পড়েছে। করমজল, চাঁদপাইসহ বিভিন্ন এলাকায় বনের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে।
তবে বড় কোনো বিপর্যয়ের শঙ্কা এখনো তৈরি হয়নি। বনের অভ্যন্তরে থাকা প্রাকৃতিক উচু টিলাই বন্যপ্রাণীদের জন্য রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যপ্রাণীরা এসব উচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে নিরাপদে রয়েছে।
সুন্দরবন করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনের কিছু অংশে পানি ঢুকে পড়েছে, করমজলের রাস্তাঘাট পানির নিচে। তবে এখন পর্যন্ত বন্যপ্রাণীর কোনো দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। উচু টিলাগুলোর কারণে প্রাণীরা সহজেই আশ্রয় নিতে পেরেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ পানি বাড়ায় বনপথে চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বনরক্ষীদের চলাফেরাও সীমিত হয়ে পড়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস