সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের ধানসাগর স্টেশনের অদূরে তেইশের ছিলা ও শাপলার বিল এলাকায় লাগা আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বন, বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের রোববার রাতভর চেষ্টায় সকাল থেকে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এখন পর্যন্ত পুরোপুরি আগুন নির্বাপন সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার সকালে সকাল ৯ টার দিকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকরা সম্মিলিতভাবে অগ্নি নির্বাপনের কাজ করছেন। কেউ পানি ছেটাচ্ছেন, কেউ কাঁচা গাছের ডাল কেটে পিটিয়ে আগুন নির্বাপনের চেষ্টা করছেন, আবার কেউ ধোঁয়া ওঠা জায়গা পাড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে সুপ্ত আগুন জ্বলে উঠছে।
এদিকে আগুনের ঘটনাস্থল থেকে পানির উৎস মরা ভোলা নদী প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হওয়ায় পানি ছেটাতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের। এছাড়া নদীটির নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভাটার সময় কোন পানি থাকছে না। যার ফলে শুধু জোয়ারের সময় পানি দিতে পারছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এই কারণে আগুন নিভাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
এর আগে রোববার সকালে ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির অন্তরগত তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন সনাক্ত করে বন বিভাগ। এরপর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ভিটিআরটি, সিপিজি, টাইগার টিমের লোকদের নিয়ে সেখানে ফায়ার লাইন তৈরির কাজ শুরু করে বন বিভাগ। তবে দূর্গম ওই এলাকায় আগুনের অত্যাধিক তাপ, বাতাস, ধোঁয়া এবং দ্রুত ছড়ানোর কারণে বেশ বেগ পেতে হয় তাদের। সেই সাথে ভাটার কারতে বিকেল পর্যন্ত পাম্প বসানো এবং পানি দেওয়ার ব্যবস্থা কর গিয়েছিল না।
বিকেলে আগে ফায়ার সার্ভিসও সেখানে কাজে যোগ দেয়। সন্ধ্যার আগে মরা ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে পানির পাইপ টানতে শুরু করে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কার্মীরা। রাত সাড়ে ৮টার পর সেখানে পানি দেওয়া শুরু হলেও ভাটার কারণে ব্যহত হয়। পরে মধ্য রাত থেকে জোয়ারে আবার পানি দেওয়া শুরু হয়।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান সোমবার সকালে বলেন, আগের থেকে আগুনের প্রকোপটা এখন কম। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, তবে পানি সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। রাতের বেলায় এই দূর্গম বনে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আবার ভাটার সময় নদীতে পানি থাকে না। তাই সব সময় পানি দেওয়া যাচ্ছে না। সকালে এখন জোয়ার থাকায় পানি ছেটানো হচ্ছে।
রাতে জোয়ার যতক্ষণ ছিল আমরা পানি দিতে পেরেছি। পানি দেওয়ার ফলেই আগুনের প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। এখানে মাটির উপর শুকনো পাতা, মরা ডালপালার একটি স্তর। একটা সময় যখন ভাটা হয়ে যায় তখন পানি দিতে পারি না, তখনই দেখা যাচ্ছে আর কোথাও থেকে ধোঁয়া, আগুন বের হচ্ছে। এ জন্য এখনই বলা যাচ্ছে না কতক্ষণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘রাত থেকেই আগুন লাগা এলাকায় পানি দেওয়া শুরু হয়েছে। বন বিভাগ গতকালও সারা রাত কাজ করে আগের স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গেল রাতে বন বিভাগ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ছিল। এখানে আগের চেয়ে পানি পেতে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যায়। ফলে পানি দেওয়াও বেশ চ্যালেঞ্জিং। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
খুলনা গেজেট/এনএম