খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি
কয়রায় দুই মণ শুটকিসহ গ্রেফতার তিনজনের জেল-জরিমানা

সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে অবৈধ শুটকি ডিপো

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ বিষ প্রয়োগে সংগৃহিত দুই মণ চিংড়ি শুটকিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (০৩ আগস্ট) এঘটনায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

সূত্রমতে, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে শুটকির (খটি) ডিপো। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী নালা থেকে বিষ প্রয়োগ করে মারা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছগুলোও শুকানো হয় সুন্দরবনেরই কাঠ পুড়িয়ে। খুলনার কয়রা ও দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৫টি খটি রয়েছে। যেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সুন্দরবনের কাঠ। প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এসব খটি গড়ে উঠেছে। আইনি জটিলতায় এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরুপায় বলে দাবি বনবিভাগের।

কয়রা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ রবিউল হোসেন জানান, সোমবার (০৩ আগস্ট) সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুর-ই-আলম সিদ্দিকী ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দুইজনকে ৭ দিনের জেল এবং একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ায় দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৮৬ ধারায় ছাদ্দাম হোসেন (২৯) ও আব্দুল হালিম (৩৫) কে ৭ দিনের কারাদন্ড এবং বিশ প্রয়োগ করে মাছ ধরার অপরাধে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইনে মোঃ জালাল উদ্দীন পাড় নামের অপর একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার কাটকাটা পুলিশ ক্যাম্পের ফোর্সদের সহায়তায় সুন্দরবন থেকে অবৈধভাবে বিষ প্রয়োগকৃত ৮০ কেজি চিংড়ির শুটকি মাছসহ একজনকে গ্রেফতার করা হয়। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫০০০টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রার জোড়শিং এলাকায় ১৭টি অবৈধ শুঁটকির ডিপো গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে, দাকোপের কালাবগি এবং সুতারখালী এলাকায় আটটি খটি রয়েছে। দাকোপের খটিগুলো এখন বন্ধ। চালু থাকা এসব খটিতে চিংড়ি এবং সাদা মাছ শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয়। সারাবছর ধরে চলে এ কাজ।

বর্তমানে সুন্দরবনে মৎস আহরণ নিষিদ্ধ। বনবিভাগের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগে মাছ ধরার ওপর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয় জেলেদের দাবি, বিষ দেয়া মাছ পাইকারি আড়তে বিক্রি হয় না। খটি ডিপো মালিকরা তা কিনে নিয়ে শুঁটকি করে। এলাকার সচেতন মহল সুন্দরবন সংলগ্ন এই এলাকার শুঁটকি ডিপো বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়রায় আছাদুলের তিনটি, আবুল হোসেনের দু’টি, ফারুক হোসেনের দু’টি, আইয়ুব হোসেনের দু’টি (খটি) ডিপো রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জোড়শিং বাজার ও তার আশপাশ পাউবো’র বেড়িবাঁধের পাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১৭টি মাছ শুকানো শুঁটকি ডিপো। এই ডিপোগুলোতে অবাধে মাছ শুকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ। কৌশলে ডিপো মালিকদের নিজস্ব শ্রমিক দিয়ে সুন্দরবন থেকে রাতের আঁধারে কাঠ কেটে নিয়ে এসে ওই সকল ডিপোতে খুবই গোপনীয়তার সাথে রাখে। ব্যবসায়ীরা লোক দেখানোর মত কিছু সংখ্যক দেশি কাঠ সংগ্রহ করে তা না পুড়িয়ে রাতের আঁধারে সুন্দরবনের কাঠ পুড়িয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ অভিযান পরিচালনা করলেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

এ বিষয়ে ডিপো মালিক আছাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষ দিয়ে মারা কোনো মাছ শুটকি করা হয় না। আমরা শিগগরই এসব ডিপোতে শুঁটকির প্রসেস বন্ধ রাখব।’

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি সুন্দরবনে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার একমাত্র কারণ রাতের আঁধারে বিষ দিয়ে ধরা মাছের ঐ সকল শুঁটকি ডিপোতে চাহিদা বেশি।

কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাহারাম জানান, ‘বনবিভাগ সব সময় শুঁটকি ডিপোর বিপক্ষে। আইনি জটিলতায় লোকালয়ের শুঁটকি ডিপোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছি না। অবৈধভাবে যাতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরতে না পারে সে জন্য সতর্ক দৃষ্টিসহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ সম্প্রতি বিষ দিয়ে মাছ ধরার অপরাধে দু’টি মামলায় জাল নৌকাসহ জেলে আটক করে জেল হাজতে পাঠনো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ আবু সালেহ জানান, বিষ দিয়ে ধরা মাছ লোকালয়ে উঠলে তখন আর প্রমাণ করার উপায় থাকে না। একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!