বাগেরহাটের চিতলমারীতে সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক বৃদ্ধার সরকারি বন্দোবস্তকৃত জায়গা ও বসত ঘর দখলের অভিযোগ হয়েছে। চর শৈলদাহ আদর্শ গ্রামের ৬০ শতক জায়গা দখল করার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বন্দোবস্ত প্রাপ্ত এপিয়া খানমের ছেলে মিজানুর রহমান খান এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে ওই গ্রামের রাজু আহম্মেদ মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী ডলি বেগমকে বিবাদী করা হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে নিজের জমি ফেরত না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন ওই বৃদ্ধা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ভিটেমাটি ও বসতবাড়ি হারিয়ে এপিয়া খানম এবং তাঁর পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন। এ ঘটনায় পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগপত্রে জানা গেছে , ১৯৯২ সালে এপিয়া খানম চিতলমারী উপজেলার চর শৈলদাহ মৌজার জেএল নং-৭২, খতিয়ান নং-১, দাগ নং- ৫৯৫ এর ৬০ শতক জমি সরকারি ভাবে বন্দোবস্ত পান। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি সুখে শান্তি বসবাস করছিলেন। হটাৎ স্বামী মারা গেলে সন্তানদের ভরণ-পোষণের জন্যে তিনি প্রতিবেশী রাজু আহম্মেদ মোল্লার কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ২০ হাজার টাকা সুদে নেন। ওই টাকা যথা সময়ে পরিশোধ করতে না পারায় সুদে-আসলে ৫০ হাজার টাকা হয়। টাকা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করে রাজু আহম্মেদ মোল্লা। সময় মত টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এক পর্যায়ে সন্তানদের নিয়ে তিনি ঢাকা চলে যান। এই সুযোগে রাজু মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী ডলি বেগম তাঁদের বসতঘরসহ ওই জায়গা দখল করে নেন।
এ ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৭ নভেম্বর ২০২১ সালে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ২০১৭ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে এপিয়া খানমের ছেলে মিজানুর রহমান খান সরকারি বন্দোবস্তকৃত জায়গা ফিরে পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে কান্নাজড়িতকণ্ঠে এপিয়া খানম বলেন,‘আমার সন্তানরা এতিম। সুদের টাকার জন্য রাজু মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী ডলি আমাদের বসতবাড়ি ও জায়গা দখল করে নিয়েছে। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে খালাত ভাইয়ের জায়গায় আছি। বছরের পর বছর বিচারের জন্য পথে পথে ঘুরছি। জানিনা মৃত্যুর আগে ঘরবাড়ি ফিরে পাব কিনা।’
এপিয়া খানমের ছেলে মিজানুর রহমান খান বলেন,‘আমার মায়ের নামে সরকারি বন্দোবস্তকৃত জায়গা ফিরে পাওয়ার জন্য ৭ নভেম্বর ২০২১ সালে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ২০১৭ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। জায়গা ফিরে পেতে বহু ঘুরাঘুরি করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত জায়গা ফেরত পাইনি।’
এ ব্যাপারে রাজু আহম্মেদ মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী ডলি বেগম জায়গা দখল ও সুদের অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ২০০৪ সালে নগদ টাকা দিয়ে ওই জমি এপিয়া বেগমের কাছ থেকে ক্রয় করেছি। আমাদের কাছে জমি ক্রয়ের লিখিত চুক্তিপত্র ও এপিয়া খানমের সরকার প্রদত্ত মূল দলিল রয়েছে।’
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা জানান, আদর্শ গ্রামের বন্দোবস্তকৃত জায়গা হস্তান্তর যোগ্য নয়। যেহেতু উভয় পক্ষ সরকারী নীতিমালা না মেনে জায়গা বেচাকেনা করেছেন তাই তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই