বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার হার শূন্যে নামিয়ে আনতে ফের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বলেন, ‘অপরাধীরা সংঘবদ্ধ হয়ে টহল দলের উপর হামলা করলে মারণাস্ত্র প্রয়োগ করা হয়। আমি কোনো হত্যার বৈধতা দিচ্ছি না।’
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের চার দিনব্যাপী সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে শনিবার তিনি বলেন, ‘তারপরেও আমাদের সদস্যদের নির্দেশ দেয়া আছে, যদি গুলি চালাতেই হয় তবে যেন শরীরের নিচের অংশে চালানো হয়।’
রাকেশ আস্থানা বলেন, ‘তবুও রাতে ভিজিবিলিটি কম থাকায় অনেকসময় দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। তারপরেও ভবিষ্যতে আপনারা দেখতে পারবেন আমরা এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেব।’
আর হত্যা বন্ধে সীমান্তে অপরাধ দমনে যৌথভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।
সম্মেলনের শেষ দিন শনিবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মধ্যে মহাপরিচালকদের যৌথ দলিল সই হয়।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা বরাবরই আলোচনায় থাকে।
পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে রাকেশ আস্থানা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘শেষ উপায় হিসেবে গুলি চালানোর বিষয়ে বিএসএফ সদস্যরা সবসময় নির্দেশনা পেয়ে থাকে। একইসঙ্গে নন-লেথাল অস্ত্র ব্যবহার করার জন্যও নির্দেশনা রয়েছে।’
‘দুই দেশের সীমান্তে মাদক, পশু চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনা অতীতে ঘটেছে।’
তিনি জানান, আমরা দুই বাহিনী সীমান্তে সংগঠিত অপরাধ বিষয়ে রিয়েল টাইম ইনফরমেশন আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে একমত হয়েছি। যারা এসব অপরাধের পিছনে কাজ করছে তাদের বিষয়েও তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে আমরা একমত পোষণ করেছি।
বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘সীমান্তে যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলো বেশিরভাগই রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টার ভেতর। অপরাধীরা এই সময়ে তাদের কাজ চালায়। এসব অপরাধ দমন করতে গিয়ে এ বছর ৫২ জন বিএসএফ সদস্য আহত হয়েছেন।’
বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা বন্ধে বিএসএফের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।’
রাকেশ আস্থানা বলেন, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে, সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা। আমরা এটা করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই সম্মেলনে আমরা বিজিবিকে আশ্বস্ত করেছি যৌথ সমন্বিত টহলের মাধ্যমে এই কাজটি আমরা করব।’
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই সম্মেলনে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল।
এই দলে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বিজিবি সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
অন্য দিকে ছয় সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা। তার দলে ছিলেন বিএসএফ সদর দফতর এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
খুলনা গেজেট/এনএন