দৌলতপুর থানা যুবদল নেতা মাহাবুবুর রহমান মোল্লাকে হত্যা্র সময় আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবি দেখে স্থানীয়রাও বলছেন, চরমপন্থি নেতা হুমার সহযোগীরা হত্যায় অংশ নেয়। তাদের নিরাপত্তা দিতে আশপাশে আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে আসিফ, রায়হান, ইমনসহ কয়েকজন অস্ত্র মামলায় আট মাস কারাগারে ছিল। গত জুনের শেষ দিকে তারা জামিনে ছাড়া পায়। এরপরই একটি ভবন দখলের ঘটনা নিয়ে মাহাবুব ও তাঁর বন্ধু জাকিরের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। এছাড়া আরেক চরমপন্থি আরমানের সঙ্গে সখ্য, আধিপত্য বিস্তার, মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং গত অক্টোবরে তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া নিয়ে হুমা অনুসারীদের সঙ্গে মাহাবুবের দ্বন্দ্ব ছিল।
এদিকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে শনিবার গভীর রাতে সজল নামে এক যুবককে মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে দু’দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) তাজুল ইসলাম বলেন, হত্যার সময় সজল কাছাকাছি থেকে দুর্বৃত্তদের তথ্য দিয়েছেন। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতেই দুপুরে ফাঁকা রাস্তায় দুর্বৃত্তরা হত্যা করে পালিয়ে যায়।
১১ জুলাই দুপুরে দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিমপাড়ার নিজ বাড়ির সামনে মাহাবুবকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাঁর পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়। হত্যার আগে মাহাবুব ও স্থানীয় এক যুবক প্রাইভেটকার পরিষ্কার করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী যুবক জানান, মোটরসাইকেলে আসা তিন যুবক প্রাইভেটকারের সামনে দাঁড়ায়। শুধু একজনের মাথায় হেলমেট ছিল। সন্ত্রাসীরা মাহাবুবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি পালিয়ে যান। হত্যা শেষে ওই মোটরসাইকেলে করেই তারা চলে যায়।
ওই সড়কের দু’পাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয়দের মাধ্যমে ফুটেজের কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবককে চিহ্নিত করেন অনেকে।
স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেলের মাঝে বসা যুবকের নাম আসিফ। চালক ছিল রায়হান। দুটি ফুটেজে বাইকের পেছনে ভিন্ন দুই যুবককে দেখা গেছে। এতে মনে হচ্ছে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে আরও কয়েকজন আশেপাশে ছিল।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গত ৯ অক্টোবর বাগেরহাটের রামপালে অস্ত্রসহ হুমায়ুন কবির হুমা, রায়হান ইসলাম, আসিফ মোল্লা ও ইমন হাওলাদার নামে চারজনকে আটক করা হয়। স্থানীয় চরমপন্থি নেতা বড় শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে তারা সেখানে গিয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। আটকের পেছনে আরেক সন্ত্রাসী আরমানের ভূমিকা ছিল। আরমান সম্পর্কে মাহাবুবের খালাতো ভাই।
স্থানীয়রা জানান, রায়হান, আসিফ ও ইমনের বাড়ি মহেশ্বরপাড়া পশ্চিমপাড়ায়। আট মাস জেল খেটে গত মাসে তারা জামিন পায়। ছাড়া পেলেও বাড়িতে থাকতো না। একাধিক হত্যা মামলায় নাম থাকায় আটকের আগে থেকেই তারা ফেরারি জীবন কাটাচ্ছিল।
স্থানীয়রা জানান, খালাতো ভাইয়ের প্রভাব ও যুবদল নেতা হওয়ায় ৫ আগস্টের পর এলাকার জমির ব্যবসা, মাদক সিন্ডিকেটের সবকিছুই মাহাবুবের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চরমপন্থি হুমা ও উঠতি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মাহাবুবের দূরত্ব তৈরি হয়। এছাড়া কুয়েটে সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে তাঁর অবস্থান নিয়েও একটি অংশ ক্ষুব্ধ ছিল।
দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, খুনের কারণ হিসেবে একাধিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবকিছু আমরা যাচাই করে দেখছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। দ্রুতই তারা গ্রেপ্তার হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম