সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বিপর্যস্ত সিলেটে দেখা মিলেছে রোদের। প্রায় পাঁচ দিন পর শুক্রবারের (২১ জুন) রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
এদিকে সুরমাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, সিলেটের সুরমা নদীর কানাইঘাট ও সিলেট পয়েন্টে এবং কুশিয়ারা নদীর অমলশিদ, শেওলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও শেরপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শুধু ফেঞ্চুগঞ্জ-এর কুশিয়ারা নদীর পানি ০.১ সেন্টিমিটার বাড়া ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় গতকাল সন্ধ্যার হিসাব অনুযায়ী পানি কমেছে কয়েক সেন্টিমিটার।
বর্তমানে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার, অমলশিদ পয়েন্টে শূন্য দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে শূন্য দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১ দশমিক ০৩ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে শূন্য দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২০ মিলিমিটার। গতকাল দুপুর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়নি।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীতে পানির প্রবাহ কম থাকায় পানি নামতে শুরু করেছে পৌরশহরের বড়পাড়া, তেঘরিয়া, সাহেববাড়ী এলাকায়। তবে হাছননগর, নতুনপাড়া, বাধনপাড়া, শান্তিবাগ, বুড়িস্থল, ইসলামপুর, ময়নার পয়েন্টের পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মমিন বলেন, গত রাতেও বাসার সামনে পানি ছিল, আজ পানি নেমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ায় আতঙ্ক কমেছে।
তেঘরিয়ার বাসিন্দা হুজাইফা হুদা বলেন, যে হারে পানি কমছে এতে ভয় কমেছে। এখন যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে আমরা মুক্তি পাব।
এদিকে সুনামগঞ্জ পৌরশহরের পানি কিছুটা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগর, শাল্লা, ধর্মপাশা, শান্তিগঞ্জ এলাকার বন্যা পরিস্থিতি। দিন দিন আশ্রয়কেন্দ্রে বাড়ছে ভিড়। আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট ও সুপেয় পানির অভাব।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনসহ যারা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তা খুব কম। যে সমস্ত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেই সকল এলাকায় সবাই সহায়তা করছে বলে অভিযোগ অনেকের। দুর্গম এলাকায় কেউ যাচ্ছে না। তারা আরও জানিয়েছেন পানি কমলেও ভোগান্তি কমতে আরও সময় লাগবে।
জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণেই সমস্যা বেশি হয়। ঢল নামলেই পানি বাড়ে। গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়নি, উজানের ঢলও নেমেছে কম। তাই সুরমা নদীর পানি কোনো কোনো স্থানে কমেছে। তবে আজও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তাই পানি আবার বাড়তে পারে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেছেন, পুরো জেলা বন্যাকবলিত। সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের পর্যবেক্ষণে আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী আছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম