ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পর টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ডাউকি নদী ছাড়া প্রায় সব কটি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বন্যাকবলিত পাঁচ উপজেলার কোথাও বন্যার পানি কিছুটা কমেছে আবার কোথাও বেড়েছে।
বন্যায় সিলেটের জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বন্যা পরিস্থিতি তুলনামূলক খারাপ। দুই দশক পর গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ডুবে গেছে। ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে প্রশাসন। গতকালও সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল প্রায় সব কটি পয়েন্টে নদীর পানি বেড়েছে। চার পয়েন্টে নদীর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার রেকর্ড অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জে অমলসিদে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ২১৩ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজারে শ্যাওলায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার, সারি নদীর পানি জৈন্তাপুরে বিপত্সীমার ৪৩ সেন্টিমিটার এবং গোয়াইনঘাটে ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে জাফলংয়ে ডাউকি নদীর পানি গতকাল বিপত্সীমার নিচে নেমে এসেছে।
কানাইঘাট উপজেলায় বুধবার গভীর রাতে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদে বাড়ি-ঘর থেকে সরিয়ে আনার জন্য মসজিদে মসজিদে মাইকিং করা হয়। সুরমা ও লোভা নদীর তীব্র স্রোতে বিভিন্ন এলাকায় সুরমা ডাইক ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এতে উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, দিঘিরপাড় পূর্ব, বড়চতুল, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার পুরো এলাকা, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, পান্থুমাই ও শ্রীপুর বন্ধ ঘোষণা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণ, বৃষ্টিপাত ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে বন্যার কবলে পড়েছে সিলেটের পাঁচ উপজেলা। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
ফলে পর্যটকদের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
বন্ধ রাখা পর্যটনকেন্দ্রগুলো হলো, সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দি, রাতারগুল, পান্থুমাই ও শ্রীপুর।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পৃথক নোটিশে এসব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে কোম্পানিগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন।
কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পর্যটন কেন্দ্রসমূহ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সাদাপাথর পর্যটনঘাটসহ সকল পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হলো। ‘
একই দিনে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং, শ্রীপুর, বিছানাকান্দি, সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল, পান্থুমাইসহ উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন।