খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সম্পদের তথ্য গোপন মামলায় খালাস গিয়াস উদ্দীন আল মামুন : আপিল বিভাগ
  একুশে পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী পাপিয়া সারোয়ার মারা গেছেন

সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কাজ শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সিরিয়ায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশত্যাগের পর নজর এখন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে। এরই মধ্যে দেশটিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোহাম্মদ আল-বশিরকে বেছে নেওয়া হচ্ছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। যদিও সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় রয়েছে অনেক বিশেষজ্ঞের।

সিরিয়ায় ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধের পর রোববার ক্ষমতাচ্যুত হন বাশার। মাত্র ১২ দিনের ‘ঝোড়ো’ অভিযানে দামেস্ক দখল করে নেয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। তাদের নেতৃত্বে ছিল হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস)। সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে এইচটিএস পরিচালিত সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ আল-বশির।

আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, গতকাল বাশারবিরোধীরা একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে দেখা যায়, আল-বশির ও বাশার সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আল-জালালির সঙ্গে বৈঠক করছেন এইচটিএসের প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। এরপর আল-আরাবিয়া টেলিভিশনকে আল-জালালি বলেন, সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজি হয়েছেন তিনি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যামুয়েল রামানি আল-জাজিরাকে বলেন, বাশারের পতনে এইচটিএসের সঙ্গে যে কয়েকটি গোষ্ঠী ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ)। ভিন্নমত থাকা এই গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনে এইচটিএস কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, এইচটিএস ও এসএনএর মধ্যে ২০২২ সালের আগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে।

সিরিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের গবেষক লাহিব হিগাল। নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেন, এটা পরিষ্কার নয় যে নতুন সরকার গঠনের পর তারা সিরিয়ার অন্য গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষায় কীভাবে ভারসাম্য আনবে এবং কীভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা দেবে? কারণ, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সিরিয়ায় ইরাকের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে—এমন শঙ্কাও রয়েছে লাহিব হিগালের। ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর কাছে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর অনেকেই আশা করেছিলেন, ইরাকে দ্রুত গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। তবে তেমনটা হয়নি। দেশটিতে লুটপাট, সহিংসতা এবং অস্থিতিশীলতার জেরে পরিণতি গড়িয়েছিল নৃশংস এক গৃহযুদ্ধের দিকে।

এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পথরেখা দিয়েছে কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করা বাশারবিরোধী জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল কোয়ালিশন। জোটের প্রধান হাদি আল বাহরা রয়টার্সকে বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ১৮ মাসের অন্তর্বর্তী সময় প্রয়োজন। এ ছাড়া ছয় মাসের মধ্যে একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করতে হবে। ওই সংবিধানে উল্লেখ থাকবে পরবর্তী সরকার সংসদীয়, রাষ্ট্রপতি শাসিত নাকি মিশ্র প্রকৃতির হবে। সিরিয়ায় শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে চীন, ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশও।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সান ফ্রান্সিসকোর রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক স্টিফেন জুনেসের মতে, তুরস্ক, ইরান ও সৌদি আরবের মতো অনেক বাহ্যিক শক্তি নতুন সরকারের ওপর প্রভাব ফেলতে চাইবে। তাদের কিন্তু বাশারের পতনে কোনো ভূমিকা ছিল না। তাই সিরিয়ার জনগণের উচিত হবে এমন একটি সরকার গঠন করা, যারা তাদের বিশ্বাস ও স্বার্থের পক্ষে কাজ করবে।

বাশারের পতনের কৃতিত্ব দাবি নেতানিয়াহুর

বাশারের পতনের পর অস্থিতিশীলতার মধ্যে সিরিয়ার নানা এলাকায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রোববার রাতে দামেস্কে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনা এবং একটি গবেষণাকেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনী বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলের দাবি, এসব স্থাপনা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করত ইরান।

এ ছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব সিরিয়ায় অন্তত সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সোয়েইদা শহরের উত্তরে খালখালা বিমানঘাঁটি এবং দামেস্কর দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি অস্ত্রাগার। আর মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় লাতাকিয়া ও তারতুস প্রদেশ, গোলান মালভূমি এবং দারা প্রদেশের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। সিরীয় বাহিনীর অস্ত্র যেন ‘চরমপন্থীদের’ হাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে এসব হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার।

বাশারের পতনের পর গোলান মালভূমির বাফার জোনের (সংঘাতের প্রভাব এড়াতে বিশেষ অঞ্চল) সাময়িক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল নিজেদের সীমান্তে কোনো শত্রু বাহিনীকে অবস্থান নিতে দেবে না। এ ছাড়া গতকাল সিরিয়া-ইসরায়েল সীমান্ত পরিদর্শনে যান নেতানিয়াহু। সেখানে গিয়ে বাশারের পতনের কৃতিত্ব দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাশার সরকারের প্রধান সমর্থক ইরান ও হিজবুল্লাহর ওপর আমরা যে আঘাত হেনেছি, তার প্রত্যক্ষ ফলাফল এটি।’

পুতিনের সিদ্ধান্তে বাশারকে আশ্রয়

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরপরই বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়েছেন বলে রোববার খবর বেরিয়েছিল। পরে ক্রেমলিনের বরাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানায়, বাশার দেশত্যাগের পর মস্কো গেছেন। সেখানে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ায় বাশার সরকার টিকে থাকার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছিল রাশিয়া। দেশটির অনুরোধে গতকাল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়া ইস্যুতে জরুরি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

সিরিয়া নিয়ে গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে কথা বলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ব্যক্তিগতভাবে বাশার ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই মুহূর্তে বাশার কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত করেননি পেসকভ। পুতিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে কি না, তা-ও জানাননি তিনি।

সিরিয়ায় রাশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সেনা ও নৌঘাঁটি আছে। ২০১৫ সালে তারা বাশার সরকারের পক্ষ নিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু করে। ঘাঁটিগুলোর বিষয়ে পেসকভ বলেন, ‘এই ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ”। যারা এই নিরাপত্তা দিতে পারবে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে আমরা সম্ভাব্য এবং প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!