খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ
  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

‘সিনহাকে খুন করেছে পরিদর্শক লিয়াকত’

গেজেট ডেস্ক

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে খুনের জন্য পরিদর্শক লিয়াকতকে দায়ী করে বিচারকের কাছে নিজের প্রতি সদয় হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। বুধবার(১২ জানুয়ারি) যুক্তিতর্ক চলাকালীন ১০ মিনিট সময় প্রার্থনা করে ওসি প্রদীপ এই আবেদন জানান। আদালতে উপস্থিত সূত্রে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বুধবার যুক্তিতর্কের শেষ দিনে ওসি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তার আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী যুক্তি-খণ্ডন করার সময় আদালতে ১০ মিনিট সময় প্রার্থনা করেন প্রদীপ কুমার দাশ।

এ সময় প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘স্যার (বিচারক) মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহাকে খুন করেছে পরিদর্শক লিয়াকত। এটা আমি স্পষ্ট জানি। আমার প্রতি আপনি সদয় বিবেচনা করা হোক।’ তখন প্রদীপ আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

প্রতিউত্তরে বিচারক জানতে চান, ‘আপনি (প্রদীপ) জেনে থাকলে সেটা জবানবন্দিতে বলেননি কেন? এখন মামলা রায়ের পর্যায়ে। এখন এসব কেন বলছেন?’

এদিকে যুক্তিতর্ক শেষে বিচারক মোহাম্মদ ঈসমাইল হোসেন সিনহা হত্যা মামলার রায়ের জন্য ৩১ জানুয়ারি নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আগামী ৩১ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে চূড়ান্ত রায়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বুধবার আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত তার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। মঙ্গলবার অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত তার যুক্তিতর্ক মুলতবি রেখেছিলেন। এই মামলার ১৫ আসামির পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।

অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্র এবং বাদীপক্ষের আইনজীবীরা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি খণ্ডন করেন। সর্বশেষ সওয়াল-জবাব শেষে আগামী ৩১ জানুয়ারি মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিজ্ঞ বিচারক।

এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওই মামলার আসামি ওসি প্রদীপসহ এ মামলার ১৫ জনকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ফরিদুল আলম জানান, আট দফায় গত ৭ ডিসেম্বর ৮৩ সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে জেরা শেষ হয়েছে। মোট ৬৫ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদের ৫-৭ ডিসেম্বর বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। একই সঙ্গে ৯ জানুয়ারি থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিতকে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন কক্সবাজারের র্যা ব-১৫কে।

৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিন বাসিন্দা, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্য ও ওসি প্রদীপের দেহরক্ষীসহ আরও মোট সাত জনকে গ্রেফতার করে র্যা ব।

এরপর গত ২৪ জুন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের আদালতে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আলোচিত এই মামলার ১৫ আসামির সবাই আইনের আওতায় আসে।

এ মামলায় চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যা ব-১৫ এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলায় বর্তমানে কারাগারে থাকা ১৫ আসামি হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, বরখাস্ত কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, বরখাস্ত কনস্টেবল সাগর দেব, বরখাস্ত এপিবিএনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, বরখাস্ত কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!