খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

সিত্রাংয়ের প্রভাবে আশাশুনি ও শ্যামনগরে জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধে ব্যাপক ক্ষতি

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সরাসরি সাতক্ষীরার উপকূলে আঘাত না আনলেও এর প্রভাবে নদ-নদীতে জোয়ারের সময় সৃষ্ট প্রবল ঢেউয়ে জেলার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপকূলীয় এলাকার জরাজীর্ণ উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের অন্তত ১০টি পয়েন্ট ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে উপকূল রক্ষা বাঁধের কয়েক ফুট এলাকা জুড়ে নদী গর্ভে ধসে পড়েছে। এতে ওই এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শ্যামনগর অংশের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিন বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ পরির্দশন করেছেন। সেই সঙ্গে ধসে যাওয়া অংশে দ্রুত কাজ শুরুর কথা জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে জোয়ারের সময় সৃষ্ট প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের হরিশখালী, নাপিতখালী এবং বড় গাবুরা এলাকার বাঁধ ধসে গেছে। এসব এলাকার বাঁধের ওপর দিয়ে নির্মিত ইটের সোলিংকৃত সড়কের বেশরিভাগ পাশের খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সীমান্ত নদী কালিন্দীর প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে শ্যামনগরের কৈখালী ইউনিয়নের নৈকাটি, বিজিবি ক্যাম্পসহ আদম আলীর বাড়ি সংলগ্ন অংশে প্রায় ২০০ মিটার বাঁধে ধস দেখা যায়। জোয়ারের পাশাপাশি ঢেউয়ের তীব্রতায় সোমবার বাঁধের এসব অংশ কালিন্দী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকুলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরাকে ঘিরে থাকা বাঁধের অন্তত ৭টি অংশ নদীতে ধসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ১৫নং পোল্ডারের বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করে ধসে যাওয়া এসব জায়গাগুলো চিহ্নিত করেন। দু’দিনের টানা বৃষ্টির পাশাপাশি সোমবার সকালে জোয়ারের তীব্রতা বৃদ্ধিসহ ঝড়ো বাতাসের কারনে সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরার চারপাশের ওই বাঁধে ধস নামে। সিত্রাং পরবর্তী বাঁধের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যেয়ে বাধের এসব ধস চোখে পড়ে বলে পাউবো সুত্রের দাবি।

পাউবোর শ্যামনগর অঞ্চলের সেকশন অফিসার সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, আগের দিন ঘটে যাওয়া সিত্রাং এর প্রভাবে শ্যামনগরের কোথাও বাঁধ না ভাঙলেও গাবুরার ৭টি পয়েন্টে ধস নেমেছে। বড় গাবুরাসহ নাপিতখালী, জেলেখালী, নেবুবুনিয়া এলাকার ধস ভয়ংকর পর্যায়ে পৌছেছে বলে তাদের দাবি।

তিনি আরো বলেন, চতুর্পাশে নদী বেষ্টিত গাবুরা বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী প্রথম লোকালয়। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড় সব সময় কমবেশী গাবুরাকে আঘাত করে। গাবুরার চতুর্পাশে ঘিরে থাকা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার জায়গাজুড়ে (৭টি পয়েন্টে) নদীতে ধসে যাওয়ার বিষয়টি তারা নিশ্চিত হয়েছেন। বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়ে প্রকল্প বরাদ্দ মোতাবেক দ্রুত এসব ধসে যাওয়া অংশ মেরামতে কাজ শুরু করা হবে বলেও তিনি নিশ্চত করেন।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাধের কমপক্ষে ১০টি পয়েন্ট নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি পয়েন্টে ভেড়িবাঁধের ভাঙন প্রবল আকার ধারণ করেছে। উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাউনিয়ায় শ্রীপুর এলাকার বাঁধটি আগে থেকেই ভাঙছিল। সিত্রাংয়ের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদের প্রবল স্রোতে ১০/১২ ফুট চওড়া বাঁধটি ভেঙে এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে প্রতাপনগর ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও মাছের ঘের প্লাবিত হতে পারে।

প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী জানান, বাঁধটি যথাযথভাবে সংস্কার করার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে কিন্তু সংস্কার না করায় বাঁধটি ভাঙতে ভাঙতে মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট রয়েছে। যেকোনো সময় কপোতাক্ষ নদের জোয়ারে বাঁধটি ভেঙে একাধিক গ্রাম তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

এদিকে আশাশুনি উপজেলা যুবলীগের নেতা তোষিকে কাইফু জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আশাশুনির কপোতাক্ষ নদ ও খোলপেটুয়া নদীর বিছট, কাকবাশিয়ার দুটি পয়েন্ট, খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, মনিপুর, দক্ষিণ একশরা, রুইয়ের বিল, শ্রীপুর, হরিষখালী, থানাঘাটা, বলাবাড়িয়ার দুর্গাপুর স্কুলের সামনে, কাকড়াবুনিয়া স্লুইসগেট এবং বড়দল ইউনিয়নের কেয়ারগাতিতে ভেড়িবাধ নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিভাগ-২-এর উপসহকারী প্রকৌশলী আলমগীর কবির বলেন, জিয়াউল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার দুই মাস আগে শ্রীপুরের কাজটি করেছেন। কিন্তু কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ করেননি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। এর মধ্যে সিত্রাংয়ের প্রভাবে নদের স্রোতে বাঁধটির ভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বাঁধটির অবস্থা নাজুক। ঠিকাদারকে কাজ শুরু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ ভাঙন রোধে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!