ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন কমপক্ষে ১২০ জন; যাদের মধ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর ২৩ সদস্যও রয়েছেন। সিকিমের লোনাক হ্রদ উপচেপড়ায় ওই অঞ্চলে বিপর্যয়কর বন্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে বুধবার দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলছে, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ওই রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪০ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক (৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাতের হারের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেশি।
সিকিমের মুখ্যসচিব ভি বি পাঠক ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যায় আরও কমপক্ষে ৮২ জন নিখোঁজ আছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ২২ জন; তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
চীন সীমান্তের কাছের গ্যাংটক থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত লোনাক হ্রদের ওপর অবস্থিত উপত্যকায় ভয়াবহ বন্যা বা ঢল দেখা দিয়েছে। নেপালভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ক্রায়োস্ফিয়ার বিশেষজ্ঞ মরিয়ম জ্যাকসন বলেন, প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সিকিমে এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রবল বর্ষণে লোনাক হ্রদে ব্যাপক বন্যার সূত্রপাত হয়েছে। এতে সেখানকার একটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নিখোঁজ ভারতীয় সৈন্যদের উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। সড়কপথে রাজধানী গ্যাংটকের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ২৩ জন সৈন্য নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে এবং সেনাবাহিনীর কিছু যানবাহন পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির আবহাওয়া বিভাগ সিকিমের পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধস এবং বিমান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে। একই সঙ্গে আগামী দুদিন সিকিমের কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অঞ্জন বসুমাতারি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাথে সিকিমকে সংযোগকারী প্রধান মহাসড়কটি ভেঙে গেছে। সড়কপথে গ্যাংটকের সাথে যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, আশপাশে বসবাসকারী প্রায় ১৫ হাজার মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আকস্মিক বন্যায় তিস্তা নদীর অন্তত আটটি বড় সেতু ভেসে গেছে।
সূত্র: রয়টার্স।
খুলনা গেজেট/এইচ