খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

সাড়ে ৫ দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি খুলনা সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে (ভিডিও)

একরামুল হোসেন লিপু

স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালে খুলনার খানজাহান আলী থানার মীরেরডাঙ্গায় ৪ একর জায়গার উপর নির্মিত হয় খুলনা বিভাগীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল। মাঝখানে কেটে গেছে ৫৫ বছর। দুঃখের বিষয় দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ দশকেও বিভাগীয় এ হাসপাতালটিতে উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। ৫৫ বছর পূর্বে হাসপাতালটির নির্মাণ কাঠামো যেমনটি ছিলো ঠিক তেমনটিই রয়ে গেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি এর কিছুই হয়নি। হাসপাতালের চারদিকে সীমানা প্রাচীরগুলো ভেঙ্গে গেছে। কোন নৈশ প্রহরী নেই। গরু ছাগল এবং বহিরাগতরা অবাধে বিচরণ করছে। ভর্তিকৃত রোগী তাদের স্বজন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক এবং নার্স রাতের বেলা কিছুটা আতঙ্কগ্রস্থ থাকেন।

হাসপাতালটিতে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীদের চিকিৎসা সেবা সঠিকভাবে মিলছে না। সংক্রামক ব্যাধি এ হাসপাতালটি দেখে যে কারোরই মনে হবে হাসপাতালটি নিজেই সংক্রমিত হয়ে আছে।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লম্বাকৃতির এক তলাবিশিষ্ট হাসপাতালের মূল ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রূপ নিয়েছে। ভবনের দেয়াল এবং ছাদের প্লাস্টার খসে খসে পড়তে শুরু করেছে। ছাদের নীচে দেয়াল স্যাঁতসেতে হয়ে নীল বর্ণ ধারণ করেছে। ভবনের পিছনে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক ভবনগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত এসকল ভবনগুলো আশেপাশে জঙ্গলে রূপ নিয়েছে। সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে। হাসপাতালটিতে বছরের পর বছর ধরে নেই কোন ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্ন কর্মী, আয়া নৈশপ্রহরী, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, আউটসোর্সিংয়ের ২ জন সুইপার দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

২০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া, টিটিনাস, জলবসন্ত, জলাতঙ্কসহ সকল প্রকার সংক্রামক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তন্মধ্যে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ। বাকী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই সীমিত।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগীর প্রচুর চাপ থাকে। প্রতিবছর হাসপাতালটিতে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক ডায়রিয়ার রোগী সেবা নিয়ে আসেন। এ বছর খুলনাঞ্চলে প্রচন্ড তাপদাহ বৃদ্ধির কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা, উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর থেকে প্রতিদিন হাসপাতালটিতে ৪০-৫০ জন ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এর মধ্যে ২০-২৫ জন রোগীকে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। বহির্বিভাগে রোগী দেখার ব্যবস্থা না থাকায় বাকী রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সূত্রমতে, ডায়রিয়া রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ থাকলেও স্টোরেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে হাসপাতালটিতে সংক্রামক ব্যাধির কোন ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই।

২০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে মাত্র ১০ টি। বাকী ১০ শয্যার মধ্যে ৫ শয্যা টিটিনাস ও ৫ শয্যা হাম বসন্ত ও অন্যান্য সংক্রামক রোগের জন্য নির্ধারিত।

হাসপাতালটিতে মহিলা পুরুষ এবং শিশুদের জন্য আলাদা কোনো কেবিন না থাকার কারণে একই ওয়ার্ডে পুরুষ, মহিলা এবং শিশু রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো টয়লেটেরও ব্যবস্থা নেই।

খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহন্মেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে আমরা প্রতিনিয়ত তাগিদ দিয়ে আসছি। হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছি। সমস্যা সম্পর্কে অবগত রয়েছি। আগে সেখানে একজন ডাক্তার ছিলেন। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ার সাথে ২ জন মহিলা ডাক্তার দেওয়া হয়েছে। শিশুর কনসালটেন্ট ডাক্তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেয়। বাকি সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট আছি।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মেডিকেল অফিসার ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, সিভিল সার্জন, মাননীয় পরিচালক স্যার উনারা সবাই জানেন এই হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করা হয়েছে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা যায় কিনা? নতুন পদ সৃষ্টি করা যায় কিনা? শিশু কনসালটেন্ট পদ সৃষ্টি করা যায় কিনা?

তিনি বলেন, আমাদের এখানে প্রচুর শিশু রোগী আসে। কিন্তু শিশু কনসালটেন্ট চিকিৎসক না থাকার কারণে খুব ছোট বাচ্চাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংগত কারণেই শিশু রোগী আসলে আমাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং শিশু হাসপাতালের রেফার্ড করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, খুলনার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে, সরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে এখানে প্রচুর রোগী রেফার্ড হয়ে আসতেছে। অফিশিয়ালি আমাদের এখানে ডায়রিয়া রোগীর জন্য মাত্র ১০ টি বেড রয়েছে। আমরা নিজেরা ৫ বেডের ব্যবস্থা করে ১৫ টা করেছি। ১৫ জন রোগী ভর্তির পর ১৬ নং থেকে ভর্তিকৃত রোগীদেরকে ফ্লোরিং করতে হচ্ছে। আমরা সর্বদা চেষ্টা করি রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার জন্য।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!