কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান এখনো চলছে। বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে মামলাও হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকাসহ ৫১টি মহানগর-জেলায় ৫২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৯ দিনে (১৭-২৫ জুলাই) সারা দেশে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে। রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৫১ জনকে।
বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্রে মামলা ও গ্রেপ্তারের এসব তথ্য জানা গেছে। অবশ্য এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় পুরোনো মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতা-কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
গতকাল বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিএনপির যুববিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ মোরশেদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি কামরুল হাসানকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বিএনপি জানিয়েছে।
এর আগে গতকাল সকালে রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
এ ছাড়া এবি পার্টির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমানের খোঁজে বুধবার রাতে তাঁর বাসায়ও পুলিশ গিয়েছিল বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিমের খোঁজে তাঁর উত্তরার বাসায় পুলিশ অভিযান চালায় বলে পরিবার জানিয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে বিভিন্ন জায়গায় চলছে পুলিশ ও র্যাবের অভিযান।
গতকাল র্যাব জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার অভিযোগে সারা দেশে ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ১৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আরও ১২৮টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে রাজধানীতে ২০১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০৯ জনকে। এর মধ্যে বুধবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয় ৪৫১ জনকে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা সহিংসতা করেছেন, তাঁরা যাতে ঢাকা ছেড়ে যেতে না পারেন, এ জন্য ডিএমপি পরিকল্পনা তৈরি করছে।
ঢাকা মহানগরের বাইরে ঢাকা জেলায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১৯টি। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল এসব মামলায় ২৫ জনসহ মোট ১৮৫ জনকে গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জে গতকাল আরও নতুন করে ৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এ নিয়ে এই জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১৪টি। গতকাল ৬৫ জনসহ এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৭৪ জনকে। গাজীপুরে গতকাল পর্যন্ত মোট ২৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গতকাল আরও ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে সেখানে ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে মামলা ও গ্রেপ্তার বেশি হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায়। চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় নাশকতার অভিযোগে নতুন আরেকটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা মিলিয়ে মোট ২৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৭৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুরে মামলা ও গ্রেপ্তার হয়েছে বেশি। রাজশাহীতে ১৫টি মামলায় গতকাল পর্যন্ত ২৬৯ জন, রংপুরে ১২টি মামলায় ১৪৩ জন এবং বগুড়ায় ১৪টি মামলায় এখন পর্যন্ত ১১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সিলেটে ১০টি। এখানে গতকাল পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২৮ জনকে। ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৫টি মামলা হয়েছে ময়মনসিংহে। সেখানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোট ১৪৯ জনকে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগে তুলনামূলক মামলা ও গ্রেপ্তার কম। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগ ও জেলা মিলিয়ে ৫টি মামলা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১১০ জনকে। আর খুলনা জেলায় গতকাল পর্যন্ত ৩টি মামলায় ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
খুলনা গেজেট/এইচ