সোমবারও দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়েছে। এ ছাড়া দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ জনতার গণপিটুনিতে ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সারা দেশে গতকাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ও জনতার গণপিটুনিতে ১১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৪৯ জন ও বিভিন্ন জেলায় ৬৩ জন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হবিগঞ্জে ৬, রাজশাহীতে ৬, কুষ্টিয়ায় ৭, চুয়াডাঙ্গায় ৪, যশোরে ৮, মানিকগঞ্জে ২, শ্রীপুরে ৬, সাভারে ৯, বরিশালে ৩, কুমিল্লায় ২, লোহাগড়ায় ২, ঝিনাইদহে ৪, চাঁদপুরে ২, কয়রাতে ১ ও সুনামগঞ্জে ১ জন রয়েছেন।
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গতকাল দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর শনিরআখড়া, কাজলা, রায়েরবাগ, যাত্রাবাড়ী, শহীদ মিনার, চানখাঁরপুলসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৪০ জনের লাশ ঢাকা মেডিকেলে ছিল। উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৯ জনের লাশ ছিল।
একদফা দাবিকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানী জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল।
হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বাড়ি।
হুইপ নজরুল ইসলাম বাবুসহ অন্তত ২০ সংসদ সদস্যের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। খুলনা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্বৃত্তরা থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের গুলি ছাড়াও উন্মত্তরা অন্তত ৮৪ জনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
যশোরে আ’লীগ নেতার হোটেলে আগুন, ২৫ লাশ উদ্ধার
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনাল এবং তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে হোটেল থেকে ১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ শতাধিক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক কেএএম মামুন ২৫টি মরদেহ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শহরের চাঁচড়া এলাকায় যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের মালিকানাধীন নাভারণ প্রিন্টিং প্রেস ভাঙচুর করা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফন্টু চাকলাদারের বাড়িতে।
সাভার-আশুলিয়ায় নিহত ১৮
ঢাকার সাভার ও আশুলিয়ায় পৃথক সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যার পর আশুলিয়া ও সাভার থানায় পুলিশের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের দফায় দফায় সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। পরে দুই থানাতেই আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় থানার আগ্নেয়াস্ত্রসহ মূল্যবান সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন– রমজান আলী, মুজাহিদ, নাহিদ, তৌহিদুর রহমান, রাসেল, রফিক, নিশান, শ্রাবণ গাজী, জাহিদুল ইসলাম ও শব্দ। অন্য আটজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা জেলার এসপি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় সংঘর্ষ হয়েছে। হামলাকারীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। কয়েক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে শুনেছি।
কুষ্টিয়ায় গুলিতে শিশুসহ নিহত ৭
কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুসহ সাতজন মারা গেছেন। গতকাল দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে সাতজন নিহত হন। থানা ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন– ইউসুফ আলী (৭০), আব্দুল্লাহ (১৩), বাবু (৪০) আশরাফ (৪২)। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ঝিনাইদহে হামলা-আগুনে ইউপি চেয়ারম্যানসহ নিহত ৪
ঝিনাইদহে দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শহরের স্টেডিয়ামপাড়া এলাকায় গতকাল পোড়াহাটি ইউপির চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরনকে (৫৫) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশ রাতে শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া হিরনের গাড়িচালক আক্তার মিয়াকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিকেলে দুর্বৃত্তরা স্টেডিয়ামপাড়া এলাকায় হিরনের বাড়িতে আগুন দেয়। পরে তাঁকে ও আক্তারকে হত্যা করে।
কালীগঞ্জ উপজেলায় এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন– শহরের ফয়লা গ্রামের মিঠুর ছেলে রাব্বি (২০) ও খয়েরতলা গ্রামের আকতারের ছেলে মনজু (২০)।
সোনাইমুড়ীতে দুই পুলিশসহ নিহত ৫
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দুই পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে সোনাইমুড়ী থানা ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধি হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। এর পর বিক্ষুব্ধরা এক এসআই ও এক কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা করে।
চাঁদপুরে আলোচিত চেয়ারম্যান সেলিম ও তাঁর ছেলেসহ নিহত ৪
চাঁদপুরে ‘বালুখেকো’ বলে পরিচিত সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান ও তাঁর ছেলে নায়ক শান্ত খানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বিকেলে নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারে জনরোষে পড়েন তারা। এ সময় নিজের পিস্তল থেকে গুলি করে আত্মরক্ষা করতে পারলেও পার্শ্ববর্তী বাগাড়া বাজারে পিটুনিতে তাদের মৃত্যু হয়।
এদিকে চাঁদপুরের কচুয়া থানার এসআই মামুনুর রশিদকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। ফরিদগঞ্জে থানায় হামলার চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে শাহাদাত (২০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এদিকে সদ্য সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির বাসা, তাঁর ভাই ডা. ওয়াদুদ টিপুর জিম সেন্টার, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দুলাল পাটওয়ারী ও পৌরসভা মেয়র জিল্লুর রহমানের বাড়ি এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি থানায়।
চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে আগুন, ৪ লাশ উদ্ধার
চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হলপাড়ায় জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলমের বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে সেখান থেকে অন্তত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পুড়ে বিকৃত হওয়ায় নিহতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
খুলনায় পিটুনিতে নিহত ৩, মেয়র, মন্ত্রী-এমপির বাড়িতে হামলা
খুলনার কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জিএম মোহসীন রেজাসহ তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বিক্ষুব্ধরা। নিহত অন্যরা হলেন– তাঁর দেহরক্ষী ইয়াকুব ও মফিজ। পরে তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে বিক্ষুব্ধরা তাঁর বাড়িতে হামলা করতে গেলে তিনি গুলি ছোড়েন। এতে সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।
ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ডুমুরিয়ার বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। খুলনা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের বাসভবন, খুলনা-৩ আসনের এমপি এস এম কামাল হোসেন ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের বাসভবনে ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে খুলনা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আকতারুজ্জামান বাবুসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়।
বরিশালে এমপি হাসানাতের বাসায় আগুন, ৩ লাশ উদ্ধার
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির কালীবাড়ি রোডের বাসায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক বেল্লাল হোসেন জানান, বাড়ি থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
কালীবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে থাকতেন হাসানাতের বড় ছেলে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, নিহত তিনজনই গৃহকর্মী। আগুন লাগার পরপর স্ত্রীসহ নিরাপদে বাড়ি ত্যাগ করেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
এদিকে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এমপির বরিশাল শহরের ব্রাউন্ড কম্পাউন্ড সড়কের বীরউত্তম ভবন, সিটি করপোরেশনের অ্যানেক্স ভবন কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমির হোসেন আমু এমপির বরিশাল শহরের বগুড়া রোডের বাসভবন ভাঙচুর করা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় নিহত ৩
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শেখ জাকির হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে জাকিরের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়ে তারা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জাকির গুলি ছুড়লে দু’জন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হন। নিহত দু’জন হলেন– আনাজ বিল্লাহ ও আদম আলী।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে সব হাজতি ও কয়েদি বেরিয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে কারারক্ষীদের জিম্মি করে চাবি নিয়ে ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যার পর জেলখানা এলাকায় সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। পরে একে একে সব হাজতি ও কয়েদি পালিয়ে যায় বলে জানা গেছে। কত হাজতি ও কয়েদি চলে গেছে, তা জানাতে পারেননি পুলিশ সুপার।
কুমিল্লায় কলেজছাত্রসহ নিহত ২
কুমিল্লায় দুর্বৃত্তদের হামলায় নাফিজুল আলম সামি নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। বিকেলে নগরীর তালপুকুরপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সামি সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকার সেলিম মিয়ার ছেলে। এদিকে চৌদ্দগ্রামে সংঘর্ষের সময় আহত অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা গেছেন।
বাউফলে যুবলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় মনিরুল ইসলাম শাহীন নামে যুবলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলার মদনপুরা ইউনিয়নের চন্দপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শাহীন ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য। এদিকে একই উপজেলার কালিশুরি বাজার এলাকায় যুবলীগ কর্মী গৌতম দাসের চোখ তুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
পাটুরিয়া নৌ ফাঁড়িতে আগুন, গুলিতে নিহত ১
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌ ফাঁড়িতে বিকেলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ প্রথমে টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ গুলি করলে তিনজন আহত হয়। তাদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম চঞ্চল (২৪) নামে একজন হাসপাতালে মারা যান।
ফরিদপুরে থানায় আগুন, গুলিতে নিহত ১
গতকাল বিকেলে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে এক দল দুর্বৃত্ত। এ সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হন। পরে থানার সব পুলিশ সদস্যকে কঠোর নিরাপত্তায় ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে নেওয়া হয়। তারা চলে যাওয়ার পর দুর্বৃত্তরা থানায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গাজীপুরে গুলিতে নিহত ১
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আনসার সদস্যের গুলিতে ইলিম সিকদার নামে একজন নিহত হয়েছেন। একাডেমির ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙতে গেলে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধি হয়ে ইলিম মারা যান। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এদিকে উত্তেজিত জনতা মৌচাক এলাকায় শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ডাকবাংলোতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে কারাগার, থানা, পুলিশ কার্যালয়, সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। কারাগারে হামলার ঘটনায় কারারক্ষীদের গুলিতে ইমান (১৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
টঙ্গীতে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
গাজীপুরের টঙ্গীতে ইসমাইল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার আউচপাড়া সুরতরঙ্গ রোডে এ ঘটনা ঘটে। ইসমাইল আউচপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে। তিনি স্থানীয় যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে হামলা
কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টি এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। বাজিতপুরে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের ‘এমপি মার্কেট’ ও তাঁর ভাগনে গাজীরচর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল মিয়ার মার্কেটে হামলা চালিয়ে লুটপাট করা হয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের শহরের খড়মপট্টি এলাকার বাসা ও হোসেনপুরে শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মশিউর রহমান হুমায়ুনের বাড়িতে হামলা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে আগুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় তাঁর ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বসুরহাট বাজারে অবস্থিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জিরো পয়েন্টের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও মির্জা টাওয়ারে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা।
মন্ত্রী তাজুল ও এমপি বাহাউদ্দিনের বাড়িতে হামলা-আগুন
কুমিল্লার লাকসামের পোমগাঁও এলাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের বাড়ি এবং নগরীর মোন্সেফবাড়ি এলাকায় সদর আসনের এমপি আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন ও মুরাদনগরের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ লাইন্সসহ কয়েকটি থানা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় এবং নেতাদের বাসাবাড়ি ও স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন
মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। সুপারশপ ভেঙে মালপত্র লুট করা হয়েছে। জেলা প্রেস ক্লাবেও ভাঙচুর চালানো হয়।
মাশরাফির বাড়িতে ভাঙচুর
নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার ডুপ্লেক্স বাড়ি, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোসের দ্বিতল বাড়িসহ স্থানীয় অনেক নেতার বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শহরের দুটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল।
মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মোহাম্মদ ফয়সাল বিপ্লবের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সিলেটে প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও এমপি রনজিত সরকারের টিলাগড়ের বাসায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজশাহীর রাণীবাজারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের রাজনৈতিক কার্যালয় ও বাড়িতে ভাঙচুর-লুটপাট হয়েছে। দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বাসভবনে হামলা হয়েছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে স্থানীয় এমপিসহ কয়েক আওয়ামী লীগ নেতার বাসভবন ও কার্যালয় এবং একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার কার্যালয় ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।