সামাজিক গবেষণায় এগিয়ে চলেছেন ড. খ. ম. রেজাউল করিম। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অসংগতি, সামাজিক সমস্যা ও উন্নয়নমূলক বিষয়গুলো উঠে আসছে তাঁর লেখায়।
ড. খ. ম. রেজাউল করিম স্বাধীনতাত্তোর প্রজন্ম। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সোনাখাড়া ইউনিয়নের সোনাখাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতা- খ. ম. খোন্দকার তোজাম্মেল হক, নিমগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ-এর সাবেক প্রধান শিক্ষক ও মাতা-বেগম নিলুফা হক।
তিনি নিমগাছী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি এবং সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯০ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সালে বিএসএস অনার্স ও ১৯৯৪ সালে এমএসএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ভাল ফলাফলের কারণে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ বৃত্তি লাভ করেন। অতঃপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ থেকে ফেলোশীপ লাভ এবং সেখান থেকে ২০০৩ সালে পিএইচ-ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার শিরোনাম ছিল : Impact of the Construction of Bangabandhu Bridge: A Sociological Study on the Affected People.
পরবর্তীতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্পকালীন কর্মজীবন শেষে ২০০৩ সালে ২২তম বিসিএস এর মাধ্যমে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোর-এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে সরকারি সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, যশোরে যোগদান করেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে খন্ডকালীন ও অতিথি শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করে থাকেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা ও লেখালেখির মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। ইতোমধ্যে তার Impact of the Construction of Bangabandhu Bridge: A Sociological Study on the Affected People (জার্মানী থেকে প্রকাশিত), Women and Poverty Alleviation in Bangladesh, আধুনিক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, উন্নয়ন সমাজবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব: ধ্রুপদী ও আধুনিক, বাংলাদেশের পরিবেশ ও সমাজ, পরিবেশ সমাজবিজ্ঞান, সামাজিক পরিবর্তন, রায়গঞ্জের ইতিহাস, বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান, বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতি, উচ্চ মাধ্যমিক সমাজবিজ্ঞান (১ম+২য় খন্ড), সমাজতত্ত্বের প্রত্যয় ও ধারণাসূত্র (কলকাতা থেকে প্রকাশিত), ধ্রুপদী সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, সমসাময়িক সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব, বাঘ নিয়ে যত কথা, আবদুল কাদির ভূঁইয়া স্মারকগ্রন্থ (সম্পাদিত), Selected Writings of Professor Abdul Quadir Bhuiyan (Edited) শিরোনামে ১৮টি গ্রন্থ এবং ৭৮টি প্রবন্ধ (বাংলা ও ইংরেজি) বিভিন্ন সম্পাদিত গ্রন্থ, স্বীকৃত জার্নাল (দেশি ও বিদেশি) ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনা-এর সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, থেকে প্রকাশিত বার্ষিক জার্নাল সমাজ সমীক্ষা এবং সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রকাশিত বার্ষিক জার্নাল (আইএসএসএন সম্বলিত) সমাজ চিন্তন-এর সম্পাদনা করছেন। তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও একাধিক গবেষণা প্রকল্পের গবেষণা সহকারী ও সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ২০০৭ সালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত Multi-sectoral Project on Violence against Women প্রকল্পের সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন, মুখ বক্তা ও প্যানেলিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি নিয়মিতভাবে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে বিভিন্ন সমসাময়িক সামাজিক ইস্যু নিয়ে লিখে থাকেন। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বিভিন্ন সমাজ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়ে থাকেন। পাশাপাশি তিনি মোটিভেশনাল বক্তা হিসেবে দেশ-বিদেশের বহু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা প্রদান করেছেন এবং এখনো সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাঁর আগ্রহের বিষয় উন্নয়ন সমাজবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের তত্ত্ব। কর্মজীবনে স্বীকৃতি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৮ তে তিনি জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক (কলেজ) এর সম্মাননা লাভ করেন।
পেশাগত কাজে তিনি ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া ভ্রমন করেছেন। একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরে তিনি সমাজবিজ্ঞান ফোরাম, খুলনা-এর সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতির আজীবন সদস্য, সমাজবিজ্ঞান এলামনাই এসোসিয়েশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য, আইবিএস এলামনাই এসোসিয়েশন-এর সদস্যপদসহ আরো নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। স্ত্রী ড. সেলিনা আহমেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক এবং একমাত্র সন্তান সায়ন্তন শাহিন রেজা ১০ শ্রেণিতে পড়ছে।
খুলনা গেজেট/এমএম