গুলিবিদ্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
এর আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করা হয়।
রোববার দুপুরে তদন্ত কেন্দ্রের ২১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জসহ পুলিশের ২১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
মেজর সিনহা রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। তিনি রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে ২০০২ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একটি ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস যাবত তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।
সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুর ব্যাপারে জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সিফাত নামের অপর একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পরিদর্শক লিয়াকত তিনটি গুলি চালান। এতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দাবি করেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়। এই সময়ে পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তাঁর পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যান।
পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এ ছাড়া গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন।
এ দিকে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যু ও মাদক উদ্ধারের দাবির ঘটনায় শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁর রাজউক কলেজের বন্ধুরা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স অ্যান্ড ক্রাইম) জাকির হোসেন এখন কক্সবাজার অবস্থান করছেন। এ ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক, কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও রামু সেনানিবাসের জিওসির একজন প্রতিনিধিকে সদস্য করে গতকাল তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিটি ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ পূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ মতামত দেবে। সূত্র : এনটিভি।