খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ; পাশের হার ৭৭.৭৮
  খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার

সাধারণ মানু‌ষের নাগালের বাইরে গরুর মাংস

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর গল্লামারী কাঁচা বাজার। সকাল ৮ টার দিকে দেখা যায় এক দম্পতিকে। তারা এক মাংসের দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছেন। কিন্তু বা‌জেটের থেকে দাম বেশী হওয়ায় তা কিনতে পারছেন না। দরদাম করে দোকানীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় চলে গেলেন মুরগীর দোকানে। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন ওই দম্পতি। পরে জানা গেল আজ তার বাড়িতে মেহমান আসছেন। তারা মুরগীর মাংস পছন্দ ক‌রেন না। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরলেন কম দামে গরুর মাথার মাংস কিনে।

কথা হয় নিরালা মোড়ে আবু মুসার সাথে, পেশায় তিনি একজন রিক্সা চালক। তিনি বলেন, যার আছে সেই বেশী খায়, যার নেই সে কোন কিছু পায়না। কোরবানী এলে মাংস খান, এছাড়া বে‌শি দাম দিয়ে মাংস কেনার ক্ষমতা তার নেই।

ময়লাপোতা মোড়ে মাংস ক্রেতা তারেক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সপ্তাহে ৩ দিন মাংস খেতেন। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে গত ১ বছর কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।

নগরীর কয়েকটি মাংসের দোকানে ঘুরে জানা গেছে, গরু মাংসের কেজি এখন ৬৫০ টাকা। করোনার মধ্যেও প্রতিকেজি মূল্য ছিল ৫৫০ টাকা। এরপর রোজার ঈদের সময় ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা বেঁধে দেয়। পরবর্তীতে হয়ে যায় ৬৫০ টাকা। এ সময়ের মধ্যে বেড়েছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। কমে গেছে বিক্রিরও পরিমাণ।

গল্লামারী বাজারের কসাই আব্দুর রহিম বলেন, দু’ বছর আগেও শুক্রবার ৩ টি গরু জবাই দিয়েছে। কিন্তু এখন গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে বেচাকেনার পরিমাণ কমে গেছে। শুক্রবার এলেই মনে হত ঈদের বাজার, কিন্তু বর্তমান বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখন একটা গরু বিক্রি হতে সময় লাগে। অনেক সময় ফ্রিজে মাংস রেখে দিতে হয়।

একই বাজারের ব্যবসায়ী মো: খোকনের দা‌বি, গত ১ বছর যাবত মাংসের কোন দাম বাড়েনি। কিন্তু কমেছে বেচাকেনা। আগে শুক্রবার হলেই দুপুরের মধ্যে ২ টি গরু জবাই দিয়ে বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যেতে পারতাম। কিন্তু এখন সেটা করতে পারিনা। কারণ বেচাকেনার পরিমাণ কম। মানুষের কাছে টাকা কমে গেছে, তাই বাজারও ঠিক মতো করতে পারছেন না।

অপর ব্যবসায়ী মো: ইমরান বলেন, গরুর মাংস বিক্রির পরিমাণ ডাউন হয়েছে করোনার পর থেকে। গরুর থেকে মুরগীর দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা এখন ফার্মের মুরগীর দিকে ঝুকছেন।

গল্লামারী বাজারে কামরুজ্জামান দম্পত্তি বলেন, কৃষ্ণনগরে দু’সন্তান নিয়ে তাদের বসবাস। একজন স্কুলে লেখাপড়া করে। অপরজন স্থানীয় একটি হোটেলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে। আর তিনি পেশায় একজন রিক্স চালক। রিক্সা চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলতে চায়না। তারপর শুক্রবার এলেই ছেলেরা মাংস খাওয়ার বাহনা করে। কিন্তু এত কম আয় দিয়ে আমাদের মতো মানুষের সংসার চালানো যেখানে দায় সেখানে আবার গরুর মাংস। তবে মুরগীর দাম কম হওয়ায় সেটি মাঝে মধ্যে কেনা পড়ে।

তিনি আরও বলেন, ৬ মাস আগে অনেক কষ্ট করে এককেজি গরুর মাংস কিনেছিলাম। আমার ছেলে দু’টি প্রাণ ভরে খেয়েছিল। আজ বাড়িতে মেহমান আসবেন। কিন্তু কী করব তা ভেবে পাছিলাম না। অনেক কষ্ট করে টাকা ধার করে ৬০০ টাকা ম্যানেজ করেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি ৬৫০ টাকা কেজি। পকেটে টাকার সংকুলান না থাকায় তিনি কম দামে গরুর মাথার মাংস ক্রয় করেন।

রিক্সা চালক মুসা বলেন, রিক্সা চালিয়ে দৈনিক ৪০০ টাকা আয় হয়। তারপর রয়েছে আনুসঙ্গিক খরচ। বাড়িভাড়া, ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, অসুস্থ্য মায়ের চিকিৎসা খরচ। লাগাম টানতে গিয়ে আর মাংসের কথা মনে পড়েনা। কোরবানী ঈদ এলেই মানুষের কাছ থেকে চেয়ে যেটুকু পায় সেটুকু দিয়ে আত্মাকে তৃপ্ত করতে হয়। কথাগুলো বলার সময় তার চোখের কোনে জল দেখা যায়।

ময়লাপোতার ক্রোতা তারেক বলেন, নিত্যপ্রয়েজনীয় পণ্যের দাম সবকিছুতে দ্বিগুণ। সংসার চালাতে বর্তমানে মধ্যম আয়ের মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একসময়ে সপ্তাহে তিনদিন মাংস খাওয়া পড়ত। এখন তা কমিয়ে একদিন করেছি। কেনার পরিমাণও কমিয়েছি। তিনি বলেন, সবকিছুরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে নিত্যপণ্যের মূল্য না কমালে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ না খেয়ে দিনতিপাত করবে। তাই সরকারের প্রতি তিনি সব জিনিষের মূল্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার অনুরোধ করেন।

খুলনা গেজেট/ এসজেড

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!