খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৬৫
  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুনে নিহত ১

সাত ভাইয়ের করুন মৃত্যু

সুমন বিপ্লব

এক গ্রামে বাস করত ৭ ভাই ও রহমত মিয়া। তার একটি গরু ছিল। গরুটির ছিল লম্বা দড়ি। সকালে গরুটি ছেড়ে দিত আর বিকেলে দড়ি ধরে টান দিত। গরুটি পেট ভরে খেয়ে আসত। এমনিভাবে অনেক বছর পার হয়ে গেল। একদিন দড়ি ধরে টান দিল কিন্তু গরু আসেনা। রহমত মিয়া হেঁটে দড়ির মাথায় এলো। এসে দেখে গরু নেই। চামড়ার মধ্যে ইট ভরে সেলাই করা। সে ইট ফেলে চামড়া নিয়ে বাড়ি এলো। তারপর চামড়া নিয়ে মনের দুঃখে হাঁটতে থাকল। সে বুঝতে পারছে ৭ ভাইয়ের কুকর্ম। মাংস খেয়ে ইট ভরে রেখেছে। ওদের সাথেতো শক্তিতে পারা যাবে না। এক সময় সন্ধ্যা হয়ে এলো। সে একটি বড় গাছের উপর চামড়া নিয়ে উঠল। ঘুমাতে পারছে না পড়ে যাওয়ার ভয়ে। গভীর রাতে কয়েকজন মানুষ গাছ তলায় বসল। একজন বললো,
: আজতো ভালোই চুরি করেছি।
: আমি কানা আমাকে যদি ফাঁকি দাও তবে আকাশ ভেঙ্গে পড়বে।
তারা সব ভাগ করলো কিন্তু কানার ভাগে কম দিল। রহমত আলি উপর থেকে সব দেখল। সে চামড়া ফেলে দিল। তারা ভাবল সত্যই আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে। ভয়ে তারা পালালো। সে সব কিছু নিয়ে আবার গাছে উঠল। সকালে বাড়ি এসে বউকে বলে,
: যাওতো ওদের ছোট টুকরীটা নিয়ে এসো।
রহমতের বউ টুকরী চাইতে গেল সাত ভাইয়ের কাছে। তারা টুকরীর তলায় গাম লাগিয়ে দিল। টুকরী দিয়ে টাকা মাপ দিল। একটা নোট টুকরীর গায়ে লেগে রইল। টুকরী ফেরত দিলে সাত ভাই দেখে টাকা। সাথে সাথে সাত ভাই চলে এলো। বললো,
: তুমি এতো টাকা কোথায় পেলে?
: আমার তো একটা তোমাদের মতো যদি সাতটা গরু থাকতো, আরো টাকা আনতে পারতাম।
: আমরা সাতটি গরু জবাই করব। তারপর কি করতে হবে।
: তোমরাতো আমার গরুর মাংস খেয়ে ফেললে। আমি চামড়া পানিতে রেখে পচিয়ে বাজারের একপাশে ধরলাম। গন্ধে সবাই টাকা রেখে পালালো।
সাত ভাই সাতটি গরু জবাই করলো। পানিতে রেখে পচালো। তারা যখন বাজারে নিয়ে ধরলো। গন্ধে বাজারের মানুষ সবাই এসে পেটানো শুরু করলো। ওরা বাড়ি এসে রহমতের ঘর জ্বালিয়ে দিল। কি আর করবে ছালি বস্তায় ঢুকিয়ে হাঁটতে থাকলো। রাস্তার পাশে দাঁড়াল। দেখতে পেলো আরেকজনে একটি বস্তা নিয়ে ভ্যান গাড়িতে আসছে।
: থামাও?
: কোথায় যাবেন? চালক জানতে চাইল।
: শহরে।
: উঠুন।
বস্তাওয়ালা জানতে চাইল
: বস্তায় কি?
: টাকা। ব্যাংকে জমা দিতে যাব।
: আমারো বস্তায় টাকা। আমিও ব্যাংকে যাব। ভালই হল, গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।
: ঠিক বলেছেন।
ভ্যান চলতেই থাকল। কিছু দূর যেতেই বললো,
: আপনি বসুন, আমি ঐ বাগান থেকে আসি। খুব চাপ।
এই ভ্যান থামাও।
ভ্যান থামাতে। টাকাওয়ালা দ্রুত বাগানের দিকে গেল। রহমত মিয়া ছাইয়ের বস্তা রেখে টাকার বস্তা নিয়ে অন্য ভ্যানে উঠল। টাকা নিয়ে বাড়ি এসে বউকে বললো টুকরী আনতে সাত ভাইয়ের বাড়ি থেকে। তারা তলায় গাম লাগিয়ে দিল। টাকা মাপার সময় একটা নোট লেগে যায়। টুকরী ফেরত দিয়ে এলো। টাকা দেখে সাত ভাই এসে বললো,
: তুমি এতো টাকা কোথায় পেলে?
: একটা ঘরের ছাই এক বাজারে ধরেছি। একপাশে সবাই টাকা রেখে পালিয়েছে। আর আমি বস্তা ভরে এনেছি।
তোমাদের মতো যদি সাতটি ঘর থাকতো তাহলে সাত বস্তা টাকা আনতে পারতাম।
সাত ভাই তাদের সাতটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দিল। তারপর ছাই সাত বস্তায় সাত ভাই হাটে নিয়ে ধরল। মানুষের চোখের ভেতরে যেতেই শুরু করলো হাটুরে কিল। ওরা বুঝতে পারল রহমত বার বার তাদের বোকা বানাচ্ছে। এবার তারা তাকে ধরে বস্তায় ভরল। উদ্দেশ্য নদীতে ফেলে আসবে। মাথায় করে কিছু দূর গিয়ে বস্তা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। এক রাখাল গরু রাখছিল ইচ্ছে করে বস্তায় লাথি,
: কে?
: তুমি কে?
: আমি রহমত মিয়া। তুমি কে?
: আমি গরু রাখাল। তুমি বস্তায় কেন?
: ওরা আমাকে রাজার মেয়ের সাথে বিয়ে দেবে অথচ আমার ইচ্ছে নেই।
: আমাকে সুযোগ দাও।
: বস্তা খোল।
রাখাল বস্তার মুখ খুলে ঢুকে পড়ল। সে বস্তার মুখ বেঁধে গরু গুলি নিয়ে বাড়ি এলো। তারা দেখে রহমত পরদিন সকালে গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছে।
: তুমি এতো গরু কোথায় পেলে?
: আর বলনা, তোমরাতো আমাকে ফেলে দিয়ে বাড়ি এলে। আমি পানির মধ্যে গিয়ে গরু আর গরু একা এই কয়েকটি নিয়ে এলাম। তোমরা অন্তত ১০০ গরু আনতে পারবে।
: চল, আমাদের নিয়ে, আমাদের গরু দরকার।
: সাতটি বস্তা আর রশি নিয়ে এসো।
তারা নদীর ধারে গেল। তাদের সাত জনকে বস্তায় ভরল। সাত জনকে নদীতে ফেলে দিল। কিছুক্ষণ পরে তারা মারা গেল। রহমত মিয়া আনন্দের সাথে বাড়ি ফিড়ে এলো। তার আর কোন শত্রু রইল না। সাত ভাইয়ের করুণ মৃত্যুর কথা কেউ জানল না।

খুলনা গেজেট/কেএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!