গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর দু’দিন আগে থেকে খুলনায় শুরু হয় পুলিশের ধরপাকড়। ২৭ অক্টোবর কার্যালয় তালাবদ্ধ করে ঢাকায় যান দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী। সেই তালা আজও খোলেনি। গত ১০ দিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে নগরীর কে ডি ঘোষ রোডের বিএনপি কার্যালয়।
অন্যান্য সময় অবরোধ বা যে কোনো আন্দোলনে কার্যালয় ঘিরে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখা যেত। রোববার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে সুনশান নিরবতা। হরতাল-অবরোধে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ভোর থেকে পুলিশের কঠোর অবস্থান দেখা যেতো। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় কার্যালয়ের সামনে পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়নি।
এদিকে গ্রেপ্তার এড়াতে খুলনার বিএনপির শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের ব্যক্তিগত মুঠো ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ছাড়া অন্যদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফা অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। কর্মসূচি দিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় খুলনার কর্মসূচি অবরোধ ‘সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যম’এ সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার পর্যন্ত জেলা ও মহানগরের ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ২০২১ ও ২২ সালের বিভিন্ন মামলায়। অবরোধের সময় ৬৫ জনকে নতুন মামলায় আদালতে প্রেরণ করেছে। নতুন দায়েরকৃত ১৫ মামলার সবগুলোই বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা হয়েছে। জেলার ফুলতলায় ১, দিঘলিয়ায় ১, বটিয়াঘাটায় ১, তেরোখাদায় ১, পাইকগাছায় ১, কয়রায় ১, রূপসায় ২, দাকোপ ২ ও ডুমুরিয়ায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া দমহানগরীর খুলনা সদর থানায় ১টি, সোনাডাঙ্গা থানায় ১টি ও আড়ংঘাটা থানা ১টি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নেতারা জানান, প্রতিদিনই বিএনপির কোনো না কোনো নেতার বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ভাংচুর করা হয় মহানগর আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনার শ্বশুর বাড়ি। এরপর থেকে তাকে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তার কারণে তারা প্রকাশ্যে আসছেন না।
খুলনা বিএনপির নতুন কমিটির ঘোষণার পর থেকে সমাবেশ, মহাসমাবেশসহ যে কোনো কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল ও তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালকে। একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় তাদেরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
আহ্বায়ক গ্রেপ্তারের পর জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবু হোসেন বাবুকে। তারও হদিস পাচ্ছে না নেতাকর্মীরা।
তবে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে কর্মীরা জানিয়েছেন। বিশেষ করে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের আইনি সহযোগিতার বিষয়টি তারা মনিটরিং করছেন। শনিবার রাতে অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল বের করে খুলনা জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়নি। সবার মোবাইলই বন্ধ।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সদস্য শরিফুল ইসলাম টিপু বলেন, কৌশলগত কারণে নেতাদের মোবাইলে ফোন বন্ধ রয়েছে। তবে তারা নিয়মিত কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের খাদ্য সরবরাহ, আইনি সহযোগিতাসহ সব বিষয় দেখাশোনা করছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম