সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত এক নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী চিকিৎসক বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করার পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত সঞ্চল মোড়লের ছেলে ইসমাইল হোসেন দীপ, সাতক্ষীরা পৌর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহরের বাঁকাল এলাকার সৈয়দ রাফিনুর রহমানের ছেলে সাইদুর জামান সাগর ও একই এলাকার মোজাফফর রহমানের ছেলে গোলাম মোস্তফা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শহরের বাঁকাল এলাকার দীপ (২৬) সেল্ফ ইনজুরি নিয়ে রাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। এসময় হাসপাতালে জরুরি বিভাগে চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ডাঃ শারমিন ফিরোজ। তিনি রোগি ও তার সাথে থাকা ব্যক্তিদের কাছে তার অসুস্থতার বিষয় বিস্তারিত শোনেন এবং সঠিক ভাবে তাকে দেখেন। রোগীর খিচুনি থাকায় এবং নিজে নিজের মাথায় আঘাত করেছেন জানতে পেরে তিনি রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। একই সাথে রোগীর অবস্থা জটিল এবং নেশাগ্রস্ত থাকার জন্য রোগীর লোকজনকে ডেকে বুঝিয়ে বলেন যে, তার মাথায় সিটি স্ক্যান লাগবে এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ডও করা লাগতে পারে।
এসব কথা শোনার পরে রোগীর সাথে থাকা সাগর ও গোলাম মোস্তফাসহ অন্যরা ডাক্তারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করে। এসময় জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত হাসপাতালের একজন স্টাফ এগিয়ে আসলে তাকে মারধর করা হয়। এসময় তারা ডাক্তারকেও মারতে উদ্যত হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাঃ শারমিন ফিরোজ ভিতরের রুমে গিয়ে কোন মতে নিজেকে রক্ষা করেন। এরপরও তারা হুমকি দিয়ে বলে, যেখানে পাবে সেখানেই ডাক্তার শারমিন ফিরোজকে মারপিট করে তার কাপড় খুলে নেবে।
এঘটনা তিনি তাৎক্ষনিক ফোনে সাতক্ষীরা সিজিল সার্জনকে অবহিত করলে তিনি থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ সদর হাসপাতালের ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এঘটনায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তৃব্যরত চিকিৎস্যক ডাঃ শারমিন ফিরোজ বাদি হয়ে রাতে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতেই ঘটনার সাথে জড়িত উল্লেখিত তিন যুবককে গ্রেপ্তার করে।
তবে আটক সাইদুল জামান সাগরের বাবা রাফিনুর রহমান প্রত্যক্ষদর্শী আল আমিনের বরাত দিয়ে বলেন, ‘গতকাল রাতে দীপ অসুস্থ্ হলে তাকে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে তাকে খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। এসময় ওয়ার্ডের একজন স্টাফ সেবা নিতে আসা রোগীসহ অন্যান্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এসময় ওই স্টাফকে তারা একটি চড় মারে।
এঘটনায় হাসপাতালের ৩ জন চিকিৎসক এসে তাদেরকে ধরে দ্বিতীয় তালায় নিয়ে বেধড়ক মারপিট করে পুলিশ ডেকে তাদের ধরিয়ে দেয়। কিন্তু সে সময় কেউ ওই নারী চিকিৎসকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি।’ মারপিটের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তারা উল্টো মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি জানান।
এদিকে, ৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে আটক ৩ যুবকের ডোপ টেষ্ট (মাদক টেস্ট) করে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা মাদকের সম্পৃকতা পাওয়া গেছে বলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘নারী চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাতেই তিন যুবককে আটক করা হয়। মঙ্গলবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/এনএম