সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার জেলার সবচেয়ে পুরাতন পাইকারি ও খুচরা বাজার। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাকসবজির পাশাপাশি খুলনা বিভাগসহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে এই বাজারে বিভিন্ন ধরনের মালামাল আনা হয় বিক্রির জন্য। ফলে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাবেচা হয় এই বাজারে।
সুলতানপুর বাজারে মাছ-মাংস ও চাল বিক্রেতাদের জন্য নির্ধারিত সরকারি টিনশেড থাকলেও কাঁচাবাজারের জন্য কোনো নির্ধারিত স্থান না থাকায় পৌরসভার চলাচলের রাস্তার উপর চলে কাঁচাবাজার। সড়কের দুইপাশে বেশিরভাগ জায়গা দখল করে বসানো হয় এসব দোকান। এতে প্রতিদিন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ক্রেতাসহ এলাকাবাসীকে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিবছর কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া হলেও সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারে কাঁচামাল বিক্রেতাদের জন্য আজও কোনো শেড নির্মাণ করা হয়নি। নির্ধারিত স্থান না থাকায় কাঁচাবাজার চলে স্থায়ী দোকানের সামনে রাস্তার ওপর। এছাড়া রাস্তার উপর দোকান বসালেও পৌর সভার খাজনার পাশাপাশি প্রতিদিন ভাড়া হিসাবে একটি নির্দিষ্ট হারে টাকা দিতে হয় সংশ্লিষ্ট দোকান মালিককে।
বড়বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমির আলী বলেন, বাজাওে বসতি দোকানের পাশাপাশি মাছ ও চাউল বিক্রির জন্য প্যেও সভার নির্ধারিত শেড রয়েছে। কিন্তু কাঁচামাল বেচাবিক্রির জন্য বাজারে কোনো নির্ধারিত জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে মাসিক ভাড়া ও খাজনা দিয়ে অন্যের দোকানের সামনে রাস্তার উপর ব্যবসা করতে হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়লে রিকসা, ভ্যান ও ক্রেতাদের নিজস্ব পরিবহণের কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল একরম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। এসময় দোকানের সামনে দাড়িয়ে ক্রেতাদের মালামাল কিনতে সমস্যা হয়।
বড়বাজারের কাঁচাপাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য মোঃ মইদুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড়বাজারে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কাঁচামাল ব্যবসায়ী রাস্তার উপর বসেই প্রায় কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা করেন। এছাড়া এখানকার আড়তগুলোতে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদাহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি ও ফল বিক্রি করতে আসেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত কোন জায়গা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় মালামাল বিক্রি করতে খুবই অসুবিধা হয়।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী সরোয়ার হোসেন বলেন, বাজারে আমাদের বসার কোনো জায়গা নেই। মাছ বাজারে টিনের শেড আছে, চাল বাজারের জন্যও শেড আছে। কিন্তু আমরা ব্যবসা করছি রাস্তার পাশে। প্রতিদিন ভ্যানে করে মালামাল এনে রাস্তায় দাড়িয়ে তা বিক্রি করতে হয়। এতে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এছাড়া এখানে যে দোকানের সামনে বসি, তাকে ভাড়া দেওয়া লাগে, আবার বাজারের ইজারাদারদের খাজনার টাকা দিতে হয়। ফলে আমরা রাস্তায় বসে পরিশ্রম করে যে টাকা আয় করি তার বড় একটি অংশ অন্যকে দিয়ে দিতে হয়।
কাঁচামাল ব্যবসায়ী ফিরোজ হোসেন বলেন, পাইকারি ঘর থেকে কাঁচামাল কিনে এনে দিনভর রাস্তায় বসে খুচরা বিক্রি করতে হয়। এভাবে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় বসার কারণে অনেক সময় রোদে শাকসবজি শুকিয়ে যায়। তখন ক্রেতারা সেগুলো কিনতে চায়। ফলে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয় আমাদের। তিনি খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত একটি সেডের দাবি জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।
এদিকে, কাঁচামাল ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই বাজার থেকে কয়েকবছরে পৌরসভাকে কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ বাজারের উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নেই। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি, পৌর মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তি নিয়েই খুচরা বিক্রেতাদের রাস্তার উপর ব্যবসা করতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা কাঁচাপাকা মাল ব্যবসায়ি সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, গত কয়েক বছরে বড়বাজারের কেবল কাঁচামাল ব্যবসায়ীদের থেকে ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ২০ লাখ টাকা রাজস্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে কাঁচাবাজারের কোন উন্নয়ন হয়নি।
তিনি আরো বলেন, বড়বাজারের রাস্তাটির অনেক খারাপ অবস্থা। এটি দীর্ঘদিনেও সংস্কার করা হয়নি। এছাড়া কাঁচাবাজারের জন্য সরকার নির্ধারিত কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে বেচাকেনা করতে হয়। এসব দোকানে মূলত খুচরা ব্যবসায়ীরা বসেন। বড়বাজারের কাঁচামালের আড়তগুলো সব নিজস্ব জায়গায় বা অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে চলছে। কোনো আড়ত রাস্তার উপর মালামাল কেনাবেচা করে না।
সাতক্ষীরা কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি কাজী কবিরুল হাসান বাদশা বলেন, সুলতানপুর বড়বাজারে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার কাঁচামাল কেনাবেচা হয়। এখানকার খুচরা কাঁচামাল ব্যবসায়ীরা রাস্তার উপর বসে ব্যবসা করেন। তাদের বসার জন্য কোনো সরকারি নির্ধারিত স্থান নেই। মাথার ওপর কোনো চাল নেই। এজন্য বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর বসতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার এমপি, পৌর মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, সুলতানপুর বড়বাজারের অধিকাংশ জায়গা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। কাঁচাবাজারের জন্য কোনো জায়গা নেই। এছাড়া আমাদের পৌরসভার আর্থিক বরাদ্দ না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও অবকাঠামো নির্মাণ ও স¤প্রসারণ করা যাচ্ছে না। তবে জেলা প্রশাসন থেকে জায়গা বরাদ্দ পেলে আমরা কাঁচাবাজারের জন্য টিনশেড নির্মাণ করে দেব।