সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ল্যাব স্থাপনের যন্ত্রপাতি দুই মাসেরও বেশি সময় ফেলে রাখা হয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা এবং মানিকগঞ্জ জেলার জন্য দু’টি পিসিআর ল্যাব হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য বিভাগ। মানিকগঞ্জ জেলা একমাসের মধ্যে সেটি চালু করে নিয়মিত করোনাভাইরাস পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সাতক্ষীরা মেডিকেলের কর্মকর্তারা গত দুইমাসেও তা স্থাপন করতে পারেনি। ফলে চলতি শীত মৌসুমে আদৌ এই পিসিআর ল্যাব চালু হবে কী না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সারাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবী জানিয়ে আসছিল জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। স্থানীয় রাজনীতিবীদ, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে তৎপর হন। জেলা নাগরিক কমিটিসহ নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। একপর্যায়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সাতক্ষীরা জেলার জন্য একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সরঞ্জাম প্রদান করে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, করোনার শুরুতেই সামেক হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। এখানে এখনো পর্যন্ত মোট ১২শ’ করোনা রোগির চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পজেটিভ ১৬ জনের মৃত্যু হয় এবং করোনা সন্দেহে মারা যান শতাধিক। বর্তমানে সামেক হাসপাতালে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগী নেই।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ কাজী হাবিবুর রহমান বলেন, আসন্ন শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসেতে পারে। সেই বিবেচনায় সারাদেশের বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১৪টি মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব বরাদ্দ দেয়া হয়। আমরা আইইডিসিআর থেকে সেটি সংগ্রহ করেছি। এজন্য মেডিকেল কলেজের ৪টি রুমও বরাদ্দ করা হয়েছে। সেটি স্থাপন করার জন্য অর্থ না থাকলেও অন্য খাত থেকে অর্থ এনে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ইতিমধ্যে কাজও শুরু করেছেন। কাজ শেষ করলে আমরা পরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারবো বলে তিনি জানান।
এদিকে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর খুলনার সহকারী প্রকৌশলী ইলেকট্রিক্যাল মোঃ আসাদুল্যাহ জানান, পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রাক্কলন করা হয়েছে। সেটা ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তর হয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের হেড অফিস থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হবে। তারপর মুল্যায়নসহ আরো কিছি প্রক্রিয়া শেষে এখানে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়তো একমাস সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা জেলা করোনা সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে দেশের ১৪টি মেডিকেল কলেজে আরটি পিসিআর ল্যাব বরাদ্দ হয়। এরমধ্যে সাতক্ষীরা মেডিকেলে চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মেশিন আসলেও অর্থ বরাদ্দ না থাকা এবং নানা জটিলতায় কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় দীর্ঘ সময় পর জনসাধারণের দাবীর প্রেক্ষিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর পিসিআর ল্যাব পেলেও কর্তৃপক্ষের অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার কারণে আজও তা মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়নি। এটা সাতক্ষীরা জেলার ২৫ লাখ মানুষের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। কর্তৃপক্ষ এই শীতেও সেটি স্থাপন করতে পারবে কী না সন্দেহ রয়েছে। এজন্য তিনি জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি এবং জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুণের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন