সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমজীবী শিশু ছেলে-মেয়েদের বিনামূল্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনবল ও সনদ অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে বে-সরকারী সংস্থা উত্তরণ। যে সকল ছেলেমেয়েরা বিপদজনক শ্রম চিংড়ী, কাঁকড়া বা কখনো বিভিন্ন ধরণের মাছ ধরাসহ কঠোর পরিশ্রমের সাথে জড়িত হয়ে পড়েছে তারা এখন পড়াশুনার পাশাপাশি ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং এবং সুইং মেশিন ও টেইলরিং কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের শিশুরা উত্তরণের এডুকো- প্রকল্পের বাস্তবায়নে এবং এডুকো বাংলাদেশ-এর অর্থায়নে এই প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে।
উত্তরণের শিশু শ্রম নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক নাজমা আক্তার বলেন, শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী ও গাবুরা ইউনিয়নের চার গ্রামে ৪ টি শিশুকেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে। এই চার টি ইউনিয়নের চারটি লার্নিং সেন্টারে ৩৫০ জন শ্রমজীবী শিশুকে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এই শিশুরা নিয়মিত লার্নিং সেন্টারে এসে লেখাপড়া করছে এবং এরমধ্যে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী ২৫ জন মেয়ে ইন্ডাষ্ট্রিয়াল সুইং মেশিন ও টেইলরিং এবং ২৫ জন ছেলে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিংয়ের বিষয়ে তিন মাসের কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে। শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ সদরে ভাড়া করা দুটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সকাল ৯ টা হতে বেলা ২ টা পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
তিনি বলেন, শ্রমজীবী এসব ছেলে-মেয়েদের বিনা খরচে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ বিতরণ ও চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হবে। বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হ্রাস করা বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য খাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুদের সুরক্ষা দেয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
এই প্রকল্পের আওতায় ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণার্থী লুৎফর রহমান, জাহিদ হোসেন, জান্নাতুন নাইম, সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণার্থী একাদশী সর্দার, তাসফিয়া খাতুন, লাবনী আক্তার, ফুলঝুরি সর্দার জানান, তারা এলাকায় মাছ ও কাঁকড়া ধরাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত ছিল। উত্তরণের এডুকো প্রকল্প তাদেরকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেয়ার পাশাপশি বিনা খরচে প্রশিক্ষণ ও চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করবে। চাকুরী না হলেও প্রশিক্ষণ শেষে নিজেদের কর্মসংস্থানের সুযোগ নিজেরাই করতে পারবেন বলে জানান তারা।
কেন্দ্র দু’টির প্রশিক্ষক বাপ্পী চন্দ্র দাশ ও মোঃ আলতাব হোসেন জানান, চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হওয়া তিন মাসের প্রশিক্ষণ কোর্স ডিসেম্বর মাসে শেষ হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে উঠবে।
প্রশিক্ষকরা বলেন, এখান থেকে প্রশিক্ষণ ও সনদ নিয়ে কেউ বেকার থাকবে না। এ সনদটি একজন কর্মীকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলবে। সনদধারীরা এ সনদ দেখিয়ে দেশ-বিদেশে খুব সহজেই ভালো চাকুরী করতে পারবেন। এছাড়া এ প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে উদ্যোগী হয়েও বিভিন্ন ব্যবসাসহ আত্মকর্তসংস্থানমূলক কাজ করতে সক্ষম হবেন।
মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব আবুল কাশেম মোড়ল বলেন, উত্তরণের এডুকো প্রকল্পের এই কার্যক্রম উপকূলীয় এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মোবাইল সার্ভিসিং এবং সুইং মেশিন ও টেইলরিং প্রশিক্ষণ এলাকার শ্রমজীবী ছেলে-মেয়েদের কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এ সকল কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম. আবুজর গিফারী বলেন, শিশু শ্রম নিরসনে এসকল কার্যক্রমে এলাকার শ্রমজীবী ছেলে-মেয়েরা উপকৃত হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই