সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন চলাকালে হামলা, মারপিট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি চারটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। অ্যাড. স.ম সালাহউদ্দিন ও অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলী বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার ( ১০ মার্চ) রাতে এবং মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা নুরুল আলম ও আড. এম শাহ আলম বাদি হয়ে শুক্রবার (১১ মার্চ) সকালে সদর থানায় পৃথক এসব এজাহার দায়ের করেন। চারটি এজাহারে ৪০ জনেরও বেশি আইনজীবীর নাম রয়েছে।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশনার নির্বাচন পরিচালনা করার সময় সহিংসতার একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর অ্যাড. স.ম সালাউদ্দিনের ল’চেম্বারের দরজার ছিটকানি ভাঙচুর করা হয়। কয়েকজন আইনজীবী ওই ল’ চেম্বারের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় অ্যাড. স.ম সালাহউদ্দিন বাদি হয়ে অ্যাড. এম শাহ আলম, অ্যাড তোজাম্মেল হোসেন তোজাম. অ্যাড. সায়েদুজ্জামান সায়েদ, অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম(৫), আমিনুর রহমান চঞ্চলসহ কমপক্ষে ১০ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে বৃহষ্পতিবার রাতে এজাহার দায়ের করেছেন।
একইভাবে নির্বাচন স্থগিত করার কিছুক্ষণ পর অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, শ্লীলতাহাানি ও মারিপট করা হয়। গালিগালাজ করা হয় অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলিকেও। সেলিনা আক্তার শেলীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব অভিযোগে অ্যাড, সিরাজুল ইসলাম (৫), অ্যাড. আলো, অ্যাড. খোকনসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে বৃহষ্পতিবার রাতে পৃথক একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ২০ জনেরও বেশি অজ্ঞাতনামা আইনজীবীর নাম আছে।
অপরদিকে বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচন চলাকালে অ্যাড. মোজাহার হোসেন কাণ্টু, অ্যাড. এখলেছার আলী বাচ্চু, অ্যাড. এসএম হায়দার, অ্যাড. স.ম সালাহউদ্দিন, অ্যাড, সেলিনা আক্তার শেলী, অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি, শাকিলা খানম, আব্দুস সাত্তারসহ কয়েকজন নির্বাচন বন্ধের জন্য নির্বাচন কমিশনারদের উপর হামলা, মারপিট ও ব্যালট ছিনতাই করেন। খবর পেয়ে সেখানে ছুঁটে গেলে অ্যাড. আ.ক.ম রেজোয়ানউল্লাহ সবুজ লোহার রড দিয়ে অ্যাড. এম শাহ আলমকে পিাটয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় অ্যাড. এম শাহ আলম বাদি হয়ে অ্যাড. স.ম সালাহউদ্দিনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের নামে শুক্রবার থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।
এদিকে অ্যাড.স.ম হায়দার, অ্যাড. স.ম সালাহউদ্দিন, এ্যাড. আ.ক.ম রেজোয়ানউল্লাহ সবুজ, অ্যাড. নুরুল আমিন, অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলী, অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি, শাকিলা খানমসহ কয়েকজন আইনজীবী ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বাচন কমিশনারদের উপর হামলা, মারপিট ও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে ওইসব আইনজীবীসহ ১১জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ২৫জন আইনজীবীকে আসামী করে দ্রুত বিচার আইনের ৩ ও ৪ ধারায় শুক্রবার থানায় পৃথক আরো একটি এজাহার দায়ের করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলম।
সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, জেলা আইনজীবী সমিতির বিবাদ মিমাংসায় দু’জন সাংসদ দু’পক্ষের যে ছয়জন আইনজীবীকে নিয়ে সমেঝাতায় বসেছিলেন সেইসব আইনজীবীর মধ্যে একপক্ষের অ্যাড. মোজাহার হোসেন কাণ্টু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. আব্দুস সামাদসহ তিনজনকে বাদ দিয়ে রাতারাতি নিজেদের মত করে নির্বাচন কমিশন গঠণ করে তড়িঘড়ি করে ১০ মার্চে নির্বাচন করা হচ্ছিল। এর ফলশ্রুতিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকেলে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম কবীর বলেন, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন চলাকালিন সহিংসতার ঘটনায় উভয়পক্ষের চারটি এজাহার জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা যাঁচাই বাছাই করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, জেলা আইনজীবী সমিতির ১১ সদস্যের মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি ৭ জন ও ৩০ জানুয়ারি একজন পদত্যাগ করায় নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন আহবান করা হয়। একই সাখে একটি গ্রুপ এসএম হায়দার কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে ১৩ মার্চ নির্বাচন ঘোষণা করে। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ অ্যাড, মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি আলোচনা করে ২৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভার মাধ্যমে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠণ করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করা হয়। ১১ টি পদের বিপরীতে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ১০ মার্চ নির্বাচন চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটে। তবে ১৩ মার্চ নির্বাচনের ঘোষনাকারি অপর গ্রুপের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. এসএম হায়দার গত ৮ মার্চ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অ্যাড. আব্দুল মজিদকে (২) সভাপতি ও অ্যাড. আ.ক.ম রেজোয়ান উল্লাহ সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।
খুলনা গেজেট/কেএ