সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির স্কুল ছাত্র হৃদয় মন্ডলকে হত্যা মামলায় দুই শিশুসহ একজন নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবিবার (১১ অক্টোবর) বিকালে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তবে সাতক্ষীরা কিশোর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত দু’হাজার টাকার বন্ডে শিশু মাসুদ রানা ও সৌমিককে তাদেরকে বাবা ও মাসহ আইনজীবী এবং সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের জিম্মায় জামিনে মুক্তি দিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হল- সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ঝিটকি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মারিফা খাতুন (৪০), তার ছেলে শিশু মাসুদ রানা (১১) ও একই গ্রামের সুকুমার মন্ডলের ছেলে সৌমিক মন্ডল (৯)।
জানা গেছে, ঝিটকি গ্রামের বিকাশ মন্ডলের ছেলে ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র হৃদয় মন্ডল বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে প্রাইভেট পড়ে এসে চাচাতো ভাই সহপাঠী সৌমিক মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে একই গ্রামের ইসমাইল হোসেন গাজীর বাড়িতে যায়। কিছুক্ষণ পর দু’টি পেরেক নিয়ে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় প্রসেনজিতের কাছে পড়তে যায় সৌমিক। কিন্তু হুদয় বাড়ি ফেরেনি। একপর্যায়ে স্থানীয় মন্দির ও মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে শামুক কুড়াতে যেয়ে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে হৃদয়ের লাশ দেখতে পায় বলে প্রচার দেয় ইসমাইলের স্ত্রী মারিফা। ওইদিন বেলা ১১টায় লাশ উদ্ধারের পরপর ইসমাইল হোসেন, তার স্ত্রী মারিফা, তাদের ছেলে শিশু আল আমিন, শিশু মাসুদ রানা, কওছার আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন ও আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আশাশুনির আব্দুল জলিলের ছেলে আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
মাসুদ রানার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওইদিন রাত ৯টার দিকে পুলিশ সুকুমার মন্ডলের ছেলে শিশু সৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসে। শনিবার বিকেলে আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আল আমিনকে মুক্তি দেয় পুলিশ। একই সময়ে মারিফা ও তার দু’ছেলেকে আসামী করে করে পুলিশ। সৌমিককে আটক রেখে তার স্বজনদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বলেন, সদর থানার সেকেন্ড অফিসার হাবিবুর রহমান। এরপর পুলিশ সৌমিক এবং মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুমনা শারমিনের সহায়তায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রবিবার শিশু সৌমিককে প্রধান আসামী করে শিশু মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে ২ ও ৩নং আসামী করে আদালতে পাঠায় পুলিশ।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় বলেন, কিশোর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আগামী ধার্য তারিখ পর্যন্ত দু’হাজার টাকার বন্ডে মাসুদ রানা ও সৌমিককে তাদেরকে বাবা ও মাসহ আইনজীবী এবং সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের জিম্মায় জামিনে মুক্তি দিয়েছেন।
অপরদিকে রবিবার বিকালে সৌমিক বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলাম, মাসুদ রানা বিচারিক হাকিম রাজীব রায় ও মারিফা খাতুন বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে হৃদয় মন্ডল হত্যার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত থাকা ও লাশ সম্পর্কে তথ্য গোপন করার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি শেষে সন্ধ্যায় দু’শিশুকে তাদের বাড়িতে ও মারিফাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সৌমিক ও মাসুদ রানার জবানবন্দি অনুযায়ি তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই।
খুলনা গেজেট/এআইএন