খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৬ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
  ফের জামিন নামঞ্জুর সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের
  শেরপুর ও ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, এ পর্যন্ত নিহত ৭

সাতক্ষীরায় শিক্ষককে মারপিটের অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়কে মারপিট করা হয়েছে। এ সময় তার কাছে থাকা রেজুলেশন খাতা, ক্যাশ খাতা ও ড্রয়ারের চাবিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র কেড়ে নিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।

চাম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান শিক্ষক উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায় এঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও মাধমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছেও লিখিতভাবে পৃথক অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় আব্দুল হাকিমকে তাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে অভিভাবক আশাশুনির গোদাড়া গ্রামের আবুল কালাম ও বাটরা গ্রামের আজিজুল হাকিম নিয়োগ বোর্ডের পাঁচজন সদস্যসহ ১৮ জনের নামে সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ-২য় আদালতে দেঃ ১২/১৫ নং মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২০ আগষ্ট মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আব্দুল হাকিমকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা ও তার এমপিও না করার জন্য বিবাদীপক্ষকে আদেশ দেন বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস। এ আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৪/২০১৫ মিস আপিল দায়ের করে। ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত ওই রিভিশন খারিজ করে দেন। রিভিশন খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ ২০১৭ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি মহামান্য হাইকোর্টে ৪৭২/২০১৭ সিভিল রিভিশন দায়ের করলে বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসান ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর তা খারিজ করে দেন। এ খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদীপক্ষ ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ৪৩২১/১৮ সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল করলে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি তা আপন আপনি খারিজ হয়ে যায়। এ দীর্ঘ সময়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এদিকে মামলার বাদিদ্বয় বিবাদীপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করে যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে সোলে মূলে মামলা খারিজ হয়ে যায় চলতি বছরের ২৪ আগষ্ট। ৩১ আগষ্ট আব্দুল হাকিম প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির আহবায়ক বরাবর আবেদন করেন। আহবায়ক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজ¤ম্মল হক রাসেল গত ২৪ সেপ্টেম্বর জিপি’র মতামত চান। ১২ নভেম্বর এনআরসি কর্তৃক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কথা বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। একইভাবে তিনি গত ২৫ নভেম্বর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আহবায়ক কমিটির মেয়াদ বাড়ানো বা বিশেষ কমিটি গঠণের অনুরোধ করেন। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইনজীবীর মতামত চাইলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর অ্যাড. আবুল হোসেন(২) ও ২৮ সেপ্টেম্বর অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী তাদের পৃথক মতামতে বলেন যে, নিম্ন আদালত থেকে বাদিদ্বয় মামলা তুলে নিলেও হাইকোর্ট ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উক্ত অবজারভেশন বাতিল বা প্রত্যাখান করেন নাই। সেক্ষেত্রে আব্দুল হাকিমের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ায় তার নিয়োগপত্র বাতিল। এমতাবস্থায় গত ১৯ ডিসেম্বর আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায় অভিযোগ করে বলেন, আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চেয়ার দখলের জন্য শিক্ষক আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নীল কণ্ঠ সোম, গোদাড়ার নজরুল গাইন, তার ছেলে ফরহাদ ওরফে নয়ন ও ইয়াছিন আলীসহ কয়েকজন সোমবার তার উপর হামলা চালায়। তিনি ঘটনার পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে থানায় অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার তিনি জেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।

জানতে চাইলে আব্দুল হাকিম জানান, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি নিয়োগ পান। তার নিয়োগ অবৈধ বলায় তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত প্রদান শিক্ষক স.ম আবুল খায়ের পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার। তার বিষয়ে এমপি সাহেবের মনোনীত একজন ব্যারিষ্টার ও হাইকোর্টে তার আইনজীবী আমিনুল ইসলামের পরামর্শ মত বাদিপক্ষ কমিটির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নেওয়ায় তার নিয়োগপত্র বৈধ বলে ধরা হবে। তাই তিনি তার শুভাকাঙ্খী কয়েকজনকে নিয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেযরাম্যান আলম ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পরামর্শ করেই সোমবার তার চেয়ারে বসেছেন। হামলার ঘটনা ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবি করেন।

জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ পেয়ে তিনি বিষয়টি আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হুসেন বলেন, উদয় ভাস্কর বন্দোবাপধ্যায়ের লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করার জন্য একজন উপপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন,উদয় ভাস্কর বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!