খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে বিভিন্ন জাতের কুল চাষ। স্বল্প খরচে অধিক লাভ ও ঝুকি কম থাকায় জেলার বেকার যুবসমাজ ও চাষীদের একটি বিরাট অংশ এ কুল চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কুল চাষ করে এ জেলার অনেকেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দুর করেছে বেকারত্ব, সৃষ্টি করেছে নতুন কর্মসংস্থানের।

সাতক্ষীরা জেলায় আমের পর একটি প্রসিদ্ধ ফলের নাম কুল। সাতক্ষীরার নাম করণে গাণিতিক ভাবে যে সাতটি জিনিস প্রসিদ্ধ তার মধ্যে কুল একটি অন্যতম ফল। এই জেলার বিভিন্ন প্রকার কুলের সুনাম রয়েছে দেশে বিদেশে। সাতক্ষীরার বেলে দোঁয়াশ মাটি ও নাতি শীতোষ্ণ জলবায়ু কুল চাষের উপযোগী। জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হচ্ছে এই কুল। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক হারে কুল চাষ করা হয়েছে। এবার উৎপাদনও বাম্পার হয়েছে বলে জানান চাষীরা।

সাতক্ষীরা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কলারোয়া, তালা, সাতক্ষীরা সদর ও কালীগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কুল চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৬শ’ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে ধান, পাট ও সবজির উৎপাদন কমে যাওয়ায় জেলার কলারোয়া উপজেলার সিঙ্গা, হুলহুলিয়া, বহুড়া ও সাতপোতা এলাকায় ১৯৯৫ সাল থেকে বাণ্যিজিক ভিত্তিতে নারিকেল কুল, বাউকুল, আপেল কুল, বলসুন্দরী ও নাইন্টি কুল চাষ শুরু হয়। এসবের মধ্যে নারিকেল কুল সুস্বাদু ও বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। কুল বিক্রি করে কৃষকরা অধিক লাভ পাওয়ায় বর্তমানে উপজেলার বেড়বেড়ি, দরবাশা, কোমরপুর, নাথুপুর, বলিয়ানপুর, সোনাবাড়িয়া, রামকৃষ্ণপুর, বড়ালি, হিজলদি, সুলতানপুর, দাঁড়কি , চাঁন্দুড়িয়া ও কাতপুরসহ শতাধিক গ্রামে কুল চাষ হচ্ছে। তাদের দেখা দেখি তালা, সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও পার্শবর্তী যশোর জেলার শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রামে এই কুল চাষ শুরু হয়েছে।

কুল চাষীরা জানান, ফাল্গুণ মাসের শেষের দিক থেকে পুরাতন কুল গাছের ডাল কেটে ফেলে জমিতে সেচ ও পরিচর্যার কাজ শুরু হয়। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে কুল গাছে ফুল ধরার পর বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এ সময় কুল ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে। অগ্রহায়ন মাসের প্রথম দিকে গাছে কুল ধরা শুরু হলে স্বাস্থ্য হানিকর নয় এমন হর্মোন স্প্রে করা হয়। পৌষ মাসের প্রথমেই কুল পাকতে শুরু করে। শেষ ফাল্গুন পর্যন্ত কুল পাওয়া যায়। বিঘা প্রতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৫৫ কুইন্টাল কুল পাওয়া যায়। বর্তমানে ভাল মানের নারিকেল কুল কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা ও আপেল কুল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। টক কুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। জেলার কলারোয়ার সিঙ্গা বাজার, তালার পাটকেলঘাটা ও সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারসহ কয়েকটি ডিপোর মাধ্যমে উৎপাদিত কুল জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ মেট্রিক টন কুল ঢাকার কাওরানবাজার, সদরঘাট, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ও ১৫ হাজারের বেশি নারী ও পুরুষ শ্রমিক এসব কুল বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

তবে,কৃষকদের অভিযোগ, সরকারি সহায়তায় কম সুদে বা সুদমুক্ত ঋণ না পাওয়ায় তারা বাজারের মহাজন বা ফড়িয়াদের কাছ থেকে দাদন নিতে বাধ্যহন। ফলে ওইসব ফড়িয়াদের কাছে কুল দিতে যেয়ে তারা ন্যয্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। অপরদিকে সরকারিভাবে বাজারজাতকরণ ও প্রক্রিয়াজাত করণের ব্যবস্থা না থাকায় উচ্চমূল্যে পরিবহন খরচ গুণতে যেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, কুল একটি মৌসুমী ফল। নারিকেল কুল, বাও কুল, আপেল কুল, বল সুন্দরী ও নাইন্টি কুল চাষ হচ্ছে। মাছের ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। এবার ৬৫০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। বেশ আগে থেকেই বাজাওে কুল উঠা শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আবহাওয়া ভাল থাকলে কুল চাষে বেশি লাভ হবে। কুল একটি সুস্বাদু, মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফল। দেশের মানুষের বিকল্প খাদ্য হিসাবে ও পুষ্টির পুরনে অনেকটা সহায়ক হবে কুল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কুল বিদেশে রপ্তানী করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!