খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৪
  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত

দীর্ঘ নয় বছর পর সাতক্ষীরার ফতেপুরের ঘটনার পুনঃতদন্তের নির্দেশ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ফতেপুর চাকদহে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা ৯ বছর পর পুনঃতদন্তের জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম জিয়ারুল ইসলাম। গত ৫ জানুয়ারি শুনানী শেষে ৭ জানুয়ারি মামলাটির পুনঃতদন্তের ওই আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের কথাও আদেশে উল্লে­খ করেছে আদালত।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ২০১২ সালের ২৭ মার্চ কালীগঞ্জের ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মঞ্চস্ত ‘হুজুরে কেবালা’ গল্পের নাট্যরুপে মহানবীকে কটুক্তি করা হয়েছে মর্মে একটি রিপোর্ট ২৯ মার্চ দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রকাশিত হয়। উক্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর জেলাব্যাপি উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ৩০ মার্চ দুপুর একটার দিকে স্থানীয় নুরুজ্জামান পাড় শিক্ষক মিতা রানী বালাকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি থেকে তুলে এনে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রধান শিক্ষক রেজোয়ান হারুন ও ছাত্র সাঈদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন বিকেলে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউপি সদস্য জাফর সাফুইকে দিয়ে নাটক পরিচালনাকারি মীর শাহীনুর রহমানসহ সাতজনের নামে থানায় মামলা করান তৎকালিন কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদউদ্দিন।

মহানবীকে কটুক্তি করার গুজবে কৃষ্ণনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান (২০১৮ সালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত) মোশারফ হোসেন ও তৎকালিন কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান আনছারউদ্দিন (প্রয়াত) ও চৌমুহুনী ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক সুপার আব্দুল কাদের হেলালীর নেতৃত্বে দু’টি মিছিল বের হয়। ৩১ মার্চ সকালে বের হওয়া ওই মিছিল থেকে ফতেপুর মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাংচুর করা হয়। এ সময় শাহীনুর মীরের বাড়ি, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য আব্দুল হাকিমের বাড়ি, শিক্ষিকা মিতা রানী বালা ও লক্ষীপদ মন্ডলের বাড়িসহ কয়েকজনের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফতেপুর সাংস্কৃতিক পরিষদ ভাংচুর ও লুটপাটের পর আগুণ দেওয়া হয়। ফতেপুরের সহিংসতার জের ধরে ২০১২ সালের পহেলা এপ্রিল একই উপজেলার চাকদহ গ্রামের কাপালিপাড়ায় আটটি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট ও ভাংচুর করে তাদের সর্বস্ব পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সহিংসতার সকল ঘটনায় ৫ এপ্রিল দায়েরকৃত চারটি মামলায় ৯৪ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা দু’হাজার ২০০ লোককে আসামী শ্রেণিভুক্ত করা হয়। কর্তব্যে অবহেলার দায়ে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক লস্কর জায়াদুল হককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। ৮ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদ উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১০ এপ্রিল তৎকালিন জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের নির্দেশে দৃষ্টিপাত পত্রিকার প্রকাশনা বাতিল করা হয়। ১২ এপ্রিল দৃষ্টিপাত পত্রিকার সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গাজীপুর জেলা সদরের একটি ব্যাচেলার ছাত্রবাস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৫ এপ্রিল তৎকালিন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান খান ও কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ফরিদ উদ্দিনকে হাইকোর্টে তলব করা হয়। ঘটনার তদন্তে হাইকোর্ট একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। ১২ জুন অতিরিক্ত যুগ্ম সচিব একেএম জহরুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে তদন্ত করেন।

২০১৩ সালের ৩০ জুলাই কালীগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি আক্তারুজ্জামান জাফর সাফুই এর দায়েরকৃত শিক্ষক, ছাত্র ও নাট্যকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় (জিআর-৭৯/১২ কালীগঞ্জ) আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বাদির নারাজির আবেদন খারিজ হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করলেও সেটিও খারিজ হয়ে যায়। ফতেপুর ও চাকদাহের ঘটনায় দায়েরকৃত তিনটি মামলায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে আদালতে পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের তৎকালিন পিপি ও বর্তমানে সাংসদ এড. মুস্তফা লুৎফুল­াহ আদালতে না রাজির আবেদন দাখিল করেন।

এ সহিংসতার উস্কানিদাতা হিসেবে দৃষ্টিপাত পত্রিকা কর্তৃপক্ষসহ মূল হোতাদের বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা খলিলুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় (জিআর-৮৪/১২ কালীগঞ্জ) ও সমাজ সেবক মৌতলার মীর আক্তার হোসেনের দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরীটি আমলে নিয়ে ২০১৪ সালের ৩০ জুলাই উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক আদালতে (ধারা-১৫৩/২৯৫-ক/১২০-৮/৩৪ পিসি) দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলাম, নির্বাহী সম্পাদক আবু তালেব মোল­া, তৎকালিন বার্তা সম্পাদক ডিএম কামরুল ইসলাম, দক্ষিণ শ্রীপুর প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, ফতেপুরের আল আমিন তরফদার ও যুবলীগ নেতা নীলকণ্ঠপুর গ্রামের মামুনর রশীদ মিন্টুর নাম উলে­খ করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়েই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে এ তথ্য গোপন করে আসামী মিজানুর রহমানের এক আবেদনের (মিস- ২৯৪৬৫/১৪) প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারক শওকত হোসেন ও বিচারক ফরিদ আহম্মেদ ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার বিচার কার্যক্রম ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তীতে কয়েক দফায় স্থগিতাদেশ বাড়ানোর পর ২০১৭ সালের ৩ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ বাতিল হয়ে যায়। আসামী মিজানুর রহমান হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২১ আগষ্ট সুপ্রিম কোর্টে ১১৫৬/১৭ নং ক্রিমিনাল মিস আপিল দায়ের করলে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই তা খারিজ হয়ে যায়। এর ১৬ মাস পর গত ৪ জানুয়ারি বাদির নারাজী আবেদন শুনানী শেষে বৃহষ্পতিবার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম এ রায় দেন।

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় দৃষ্টিপাত সম্পাদক জিএম নূর ইসলামসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে পূণঃতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!