সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে তৃতীয় দিনের মত বুধবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের পূর্বে এলসি করা প্রায় দেড় শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুপুরে শহরের সুলতানপুর বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, গত সোমবার থেকে হঠাৎ করেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোন কিছু না জানিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে গত তিনদিন যাবত ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে কোন পেঁয়াজবাহি ট্রাক প্রবেশ করছে না। তবে সীমান্তের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় প্রায় দেড় শতাধিক পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়ে আছে। ভারতীয় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই পূর্বের এলসিকৃত এসব পেঁয়াজবাহি ট্রাক যে কোন সময় ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করবে।
ভোমরা স্থলবন্দরের শুল্ক ষ্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত এক সপ্তাহে (গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ৫৩৩ টি ট্রাকে ১২ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে । তিনি আরো জানান, বুধবার তৃতীয়দিনের মত কোন ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাক এ বন্দরে প্রবেশ করেনি। এদিকে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বাংলাদেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যাতে পেঁয়াজ মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি না করতে পারে সেজন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ মুরশিদা খাতুন জানান, বুধবার সকাল থেকে তারা ভোমরা স্থল বন্দরসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার মনিটরিং করছেন। অপরদিকে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজার ব্যবসায়ীদের সাথে বুধবার দুপুরে মতবিনিময় করেছেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানজিল্লুর রহমান। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা জিএম আব্দুল্লাহ এসময় তাঁর সাথে ছিলেন।
মতবিনিময়কালে বড়বাজার মুদি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক কাজী কামরুজ্জামান মুকুল, কাঁচা ও পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী কবিরুল ইসলাম বাদশা, সাধারন সম্পাদক রওশন আলীসহ অন্যান্য ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘ভারত সরকার রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে শুনে ক্রেতারা একেক জন পাঁচ থেকে দশ কেজি করে পেঁয়াজ কিনছেন। অনেকে আরো বেশি নিচ্ছেন। এভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ ক্রয় করায় হঠাৎ করে বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া বন্দরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছেন। যে কারণে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দামে কমে যাবে।’
সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানজিল্লুর রহমান বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ রয়েছে। ভারত সরকার রফতানি বন্ধ করলে সাময়িক সমস্যা হলেও সরবরাহের কোন ঘটতি হবে না। কাজেই বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অধিক মুনাফা লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে কেউ যদি পেঁয়াজ মজুদ করে রাখে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানান।
খুলনা গেজেট/এনএম/এমআর