খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

সাতক্ষীরায় তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌছেঁ দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের অবহেলিত নারী, শিশু ও কিশোরীরা। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করেন প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ। বর্তমানে সাতক্ষীরার ৭৮টি ইউনিয়নের ২২৭ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১০হাজারেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের নিয়মিত উপস্থিতি, ওষুদের পর্যাপ্ত সরবরাহ আর পরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে জেলার কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। নিজ এলাকাতেই প্রাথমিক চিকিৎসা পেয়ে খুশি এলাকাবাসী। গ্রামের হতদরিদ্র মহিলা, শিশু ও কিশোরীরা এখন হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা গ্রাহণকারিরা বেশির ভাগই হতদরিদ্র ও গরিব শ্রেণির পরিবারের নারী ও কিশোরী।

এছাড়া অন্যান্য সদস্যরা কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন। সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে সরকারি ওষুধ। তবে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সি.এইস.সি.পি) ছাড়া ডাক্তারদের ক্লিনিকে পাওয়া যায় না বলে জানান স্থানীয়রা। এরপরও কমিউনিটি ক্লিনিক যেন বন্ধ না হয় এবং চাহিদা মোতাবেক ওষুধ সরবরাহ করা হয় এ জন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

সাতক্ষীরা জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় বর্তমানে ২২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আর দুইটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণাধীন। প্রতিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ছয় হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা। একটি কার্টুনে দুইমাসের জন্য ৩০ পদের ওষুধ নির্ধারণ করা থাকে। এসমস্ত ঔষধ দিয়ে ওইসব ক্লিনিকে ছুটির দিন ব্যতীত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হয়ে থাকে। নারী ও কিশোরীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা, কৈশোর সমস্যা সেবা ছাড়া ও ইপিআই কর্মসূচির সকল কার্যক্রম এসব কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বাস্তবায়ন করা হয়।

জেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে জানা যায়, এখানে সার্বিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যার আওতায় গর্ভবর্তী মহিলাদের প্রসব পূর্ব প্রতিষেধক টিকাদানসহ প্রসব পরবর্তী নবজাতকের সেবা, সময়মত যক্ষা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কফ, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম, হেপাটাইটিস-বি, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেয়াসহ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্র্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয় এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে। জনগণের জন্য বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণের জন্য ফলপ্রসূ ব্যবস্থ্য গ্রহণ ও সেবা প্রদান করা হয় এই ক্লিনিক থেকেই। তাছাড়া, ম্যালেরিয়া, যক্ষা, কুষ্ঠ, কালা-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সেগুলোর সীমিত চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে। সাধারণ জখম, জ্বর, ব্যথা, কাটা, পোড়া, দংশন, বিষক্রিয়া, হাঁপানী, চর্মরোগ, ক্রিমি এবং চোখ, দাঁত ও কানের সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সংক্রান্ত কনডম, পিল, ইসিপিসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত করা হয়। জটিল রোগীদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক সেবা প্রদান করে দ্রুত উচ্চতর পর্যায়ে রেফার করা হয়।

এদিকে, কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরি রাজস্ব খাতে না হওয়ায় কর্মঠ ও দক্ষ সিএইসসিপিরা চাকরি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন। যাতে মেধাবী ও দক্ষ কর্মী হারাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। চাকরি দ্রæত রাজস্ব না করলে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

জেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক ব্যক্তিরা জানান, এখন আর কষ্ট ও টাকা খরচ করে শহরের হাসপাতালে যেতে হয় না তাদের। প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা সেবা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে নিতে পারছেন তারা। এখান থেকে ওষুধ নিতে কোন টাকা দিতে হয় না। তবে যদি বড় ডাক্তাররা ক্লিনিকে নিয়মিত আসতো চিকিৎসা সেবার মান আরও ভাল হতো বলে জানান তারা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকী কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারি (এইচ,এ) শরিফুন নেছা ও কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সি.এইস.সি.পি) আমিনুর রহমান জানান, ক্লিনিকে আগত যে কোন রোগীর নাম প্রথমে রেজিস্ট্রার করা হয়। পরে ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপির নিকটে রোগীরা তাদের সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বলার পর রোগীর অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। তবে, রোগ যদি জটীল হয়ে থাকে তাৎক্ষনিক ভাবে তাদেরকে অপেক্ষাকৃত উচ্চতর চিকিৎসা সেবার জন্য সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে ঝিটকী কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রতিমাসে কয়েক হাজার নারী ও কিশোরীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ দেওয়া হচ্ছে পাশাপাশি একই ক্লিনিকের মাধ্যমে কিশোরীদের বিভিন্ন ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে মাতৃ মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে এসেছে। তাছাড়া স¤প্রতি ব্র্যাকের সাথে যুক্ত হয়ে য²া রোগ নিয়েও কাজ করছেন বলে জানান তারা।

সাতক্ষীরা জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, গ্রামীণ জনগনের অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সেবা বিতরণের প্রথম স্তর হলো কমিউনিটি ক্লিনিক। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুসারে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। বর্তমানে তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন স্বাস্থ্যসেবায় মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মা ও শিশুর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় এক নীরব বিপব ঘটিয়েছে এই ক্লিনিক।

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে সচেতনতার অভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা গ্রহিতাদের ভিড় না থাকলেও এখন ক্লিনিকগুলোতে রোগীর ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামা লের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বাড়ির কাছাকাছি হওয়ায় এবং সেখানে বিনামূল্যে সাধারণ রোগের ওষুধ পাওয়া যায় বলে দিন দিন এর সেবা গ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ছে।

এব্যাপার সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন শাফায়াত বলেন, বর্তমানে জেলার সাত উপজেলায় অবস্থিত ২২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের মাঝে বিনামূল্য চিকিৎসা সেবা পৌছেঁ দেয়া হচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগীদের চাপ কমেছে। সাধারণ মানুষদের চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসতে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সক্ষমতা আরও বাড়াতে পারলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর চাহিদামত চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!