খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আজ খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি যাবেন ৩ উপদেষ্টাসহ সরকারের প্রতিনিধি দল

সাতক্ষীরায় ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে অনিয়মের অভিযোগ

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নদীর দুই পাড়ে অনুমোদনহীন স্থাপনা উচ্ছেদ না করে যেভাবে নদী খনন করা হচ্ছে তা কোনো উপকারে আসবে না বরং নদী খনন করে খাল বানানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও এরই মধ্যে খননকৃত নদীর পাড় ধসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৫ দশমিক ৯০ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী গত বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে খননকাজ শুরু করে চলতি ২০২৩ সালের ৩০ মে’র মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। নকশা অনুযায়ী নদীর তলদেশে ২৮ ফুট ও উপরের অংশে ৮০-১০০ ফুট প্রশস্ত রেখে খনন করতে হবে। কিন্তু নকশা অনুযায়ি কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এছাড়া কাজের যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সরেজমিন কালীগঞ্জ উপজেলার দুদলী গ্রামে ছোট যমুনা নদী পুনঃখনন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চারটি এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পলি মাটি তুলে নদী পাড়েই রাখা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি, একটু বৃষ্টি হলেই ওই মাটি ধসে পুনরায় ভরাট হয়ে যাবে নদী।

এ ব্যাপারে ছোট যমুনা নদীসংলগ্ন দুদলী গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম, সোহেল হোসেন ও হোসেন বলেন, যমুনা নদী পুনঃখনন করে সরু খালে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের দাবি, আগে নদীর আকার যতটুকু ছিল বর্তমানে তার ৪ ভাগের ১ ভাগও খনন করা হচ্ছে না। সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছোট যমুনা নদীটি পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে তা পূরণ হবে না। নদীর তলদেশের পলিমাটি তুলে উপরে রাখা হচ্ছে, যা কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় নদীগর্ভে ধসে পড়বে। এভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।

স্থানীয় মথুরাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম বলেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে চরম অনিয়ম হচ্ছে। এভাবে খননকাজ সম্পন্ন করা হলে সরকারের টাকার অপচায় হবে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করা হবে।

নদী বাঁচাও আন্দোলন নেতা অধ্যক্ষ আশেক-ইলাহী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ছোট যমুনা নদী খননে চরম অনিয়ম করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করে দায়সারা গোছের খনন করছে, যা এলাকার মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। যেভাবে খনন করলে নদী জোয়ারভাটা বা নাব্যতা ফিরে পাবে তা হচ্ছে না। এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে সাড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ ফুট গভীর করে কোনো ভরাট নদী খনন করা হলে তাতে কি নাব্যতা ফিরে পাবে? শুধু সরকারের টাকা নষ্ট করা ছাড়া কোনো কাজে আসবে না। তিনি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেন।

এ বিষয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ ইউনুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছোট যমুনা নদী পুনঃখননে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তবে নদীপাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, যা উচ্ছেদ করার জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় নদী খননকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এসব স্থাপনার কারণে খননকৃত মাটি রাখা মুশকিল হচ্ছে। তার পরও খুব কষ্ট করে খনন করা হচ্ছে ছোট যমুনা নদী।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছোট যমুনা নদী পুনঃখনন কাজে কোনো রকম অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সিডিউল অনুযায়ী খননকাজ বুঝিয়ে দিতে হবে। আমি সদ্য সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। তারপরও খনন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!