সাতক্ষীরায় স্থানীয় প্রশাসনের বেধে দেয়া সময় সুচি মোতাবেক চলতি মৌসুতে আম ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। রোববার (২ মে) প্রথম দিনই ভাঙ্গা হচ্ছে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম। পর্যায়ক্রমে ২১ মে ভাঙ্গা হবে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ৪ জুন আম্রপালি। উৎপাদন মোটামুটি ভাল হলেও দামে খুশী নন চাষিরা। তবে আমের মান বজায় রাখতে তৎপর প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৫ হাজারেরও বেশি বাগানে আম চাষ হয়েছে। ১৩ হাজার ১শ’ জন চাষি এই আম চাষ করেছেন। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিকটন। এবার ৫শ’ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম চাষ করা হয়েছে। আম উৎপাদনের টার্গেট পূরণ হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
আবহাওয়া ও মাটির গুনে অন্যান্য স্থানের তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। দাম পাওয়ার আশায় অনেকেই তাই কাঁচা আম পাড়েন। যে কারনে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আগে থেকেই আম ভাঙ্গার তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। নির্ধারণ করে দেয়া তারিখ অনুযায়ী রোববার ২ মে থেকে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম ভাঙ্গা হচ্ছে। তবে প্রথম দিনে আমের দামে সন্তুষ্ট নন চাষিরা।
সুলতানপুর বড়বাজারে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আমের দাম গড়পড়তায় মণপ্রতি ১ হাজার ৮ শ’ থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে, চাষীরা বলছেন ন্যূনতম মনপ্রতি দাম ২ হাজার ৮ শ’ টাকা বিক্রি না হলে তাদের লোকসান হবে।
সদর উপজেলার বড়দল গ্রামের আম চাষী মোকলেছুর রহমান জানান, তার ৫বিঘা জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ১৬/১৭ টি গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম গাছ রয়েছে। আশা করছি প্রতি বিঘা জমিতে ১শ’ মণ আম পাবো।
বড়বাজারের আম ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন জানান, আজকে যেহেতু প্রথম আম আনুষ্ঠানিকভাবে বিক্রি হচ্ছে, তাই বাজার দর একটু কম। কয়েকদিনের মধ্যে বাজার চড়া হতে পারে। সুলতানপুর বড়বাজারে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আমের দাম গড়পড়তায় মণপ্রতি ১ হাজার ৮ শ’ থেকে ২ হাজার ২শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।
সুণতানপুর বড়বাজার কাঁচা-পাকা মাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু জানান, সরকারি বিধি প্রতিপালনের কিছুটা দায়িত্ব আমাদের রয়েছে। আমরা ঘোষণা দিয়েছি গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম ছাড়া অন্যকোন আম যদি কেউ এখন বড়বাজারে নিয়ে আসে তবে আমরা সে আম নষ্ট করে দিব। এছাড়া কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর বিষয়েও সতর্ক রয়েছি আমরা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, বাইরে থেকে যারা আম কিনতে আসবেন তাদেরকে কমপক্ষে তিন দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এছাড়া আম চাষিদের সুবিধার্থে ২১ মে হিমসাগর, ৪ জুন আম্রপালি ভাঙ্গার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এবছর এখনো সাতক্ষীরায় ঝড়-বর্ষা হয়নি। তাপদাহে আম কিছুদিন আগে থেকে পরিপক্ক হয়েছে। তাই ভাঙ্গার তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, সুলতানপুর বড়বাজারসহ বিভিন্ন আমের মোকামে প্রশাসনিক নজরদারি রাখা হয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে আম পাঁকালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আম সিন্ডিকেট যাতে গড়ে উঠতে না পারে সে বিষয়েও প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই