শীত বাড়ার সাথে সাথে সাতক্ষীরায় বাড়ছে শিশুদের শীতজনিত রোগ। সর্দি-জ¦র,কাশি ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত শতাধিক শিশু প্রতিদিন আসছে সামেক, সদর ও শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। এদের মধ্যে ঝুকিপূর্ণ শিশুদেরকে হাসপাতালে ভতি করা হচ্ছে। শিশু বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ক্রমশঃ বাড়বে শীত। ঠান্ডা থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিলে সুস্থ্য থাকবে তারা।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ১ থেকে দেড়শ’ শিশুকে নিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নিতে আসছেন তাদের অভিভাবকরা। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) শিশু পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৪৮টি শিশু। এছাড়া সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৪০টি শিশু। আর সামেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে শতাধিক শিশু। এছাড়া আউটডোরে এ দুই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রতিদিন কমপক্ষে ২ শতাধিক শিশু। গত সপ্তাহে এসংখ্যা ছিল অর্ধেকেরও কম। আর তার আগের সপ্তাহে সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে শিশু রোগী ভর্তি ছিল ১১টি। সদর হাসপাতালে এ সংখ্যা ছিল ১০টি। আর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ(সামেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিল মাত্র ১৩টি শিশু। শীত বাড়ার সাথে সাথে শিশুরা সাধারণত সর্দি, জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, সাতক্ষীরায় শীত শুরু হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও রাতে বাড়ছে ঠান্ডা। আবহাওয়ার এই তারতম্যের কারণে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই তারা সহজে জীবানুতে আক্রান্ত হয়। এছাড়া ধুলা-বালির আধিক্যের কারণেও তারা শ^াসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গি এলাকার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলের বয়স তিন মাস। বেশ কয়েকদিন ধরে তার কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই তাকে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে তার চিকিৎসা চলছে। ক্রমশঃ ভাল দিকের যাচ্ছে তার ছেলে।
আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা এলাকার আমিনা খাতুন বলেন,আমার মেয়ের বয়স আড়াই বছর। গত বুধবার থেকে মেয়েটির জ¦র। প্রথমদিকে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। আজকের সকালে তার খিচুনি হচ্ছিল। আমি আর দেরি না করে তাকে সামেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেছি। চিকিৎসকরা বলছেন, সে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়েছে।
সদর উপজেলার আগরদাড়ি এলাকার আমিনুর রহমান জানান, আমার ছেলের বয়স চার বছর। কয়েকদিন তার হাল্কা শ্বাসকষ্ট ছিল। গতকাল থেকে পাতলা পায়খানা হচ্ছে তার। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল বাশার বলেন, শিশুদের সর্দি-জ¦র এমনিতে কয়েকদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে অবস্থা গুরুতর হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এছাড়া শিশুর যাতে কোনভাবে শীতে ঠান্ডা না লাগে, অভিভাবকদের সে বিষয়টি খেয়াল করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন এই শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আল আহমেদ আল মাসুদ জানান, হাসপাতালে শিশুদের জন্য ৩০টি বেড রয়েছে। বর্তমানে পরিপূর্ণ থাকছে বেডগুলো। সম্প্রতি অনেক রোগীকে ফ্লোর করতে হচ্ছে। এছাড়া আউটডোরে তো ব্যাপক চাপ। শীতকালে ধুলাবালির প্রকোপ বাড়ায় শিশুরা সহজেই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু শিশুরা নয়,বয়স্ক ব্যক্তিরাও অধিক হারে আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে। পরিবেশ দূষনরোধে যেখানে সেখানে কফ ও থুথু না ফেলার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসা কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট/ টি আই