খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ পৌষ, ১৪৩১ | ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৪
  বগুড়ায় ট্রাকচাপায় বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩
  আগামী বিজয় দিবসের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করা হবে : আসিফ নজরুল
মানছে না স্বাস্থ্যবিধি, বাড়ছে উদাসীতা

সাতক্ষীরায় প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রায় প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। সাতক্ষীরার অনেক বাড়িতে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনার উপসর্গের রোগী রয়েছে। অথচ পরীক্ষার বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে অনেকেরই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সাতক্ষীরার অনেক বাড়িতেই করোনা উপসর্গের রোগী রয়েছে। এর অধিকাংশই সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি মনে করে বাড়িতেই বসে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেকেই করোনা উপসর্গ বুঝেও বাড়ি লকডাউনের ভয়ে পরীক্ষা করাতে যাচ্ছেন না। অনেকেই করোনা পরীক্ষার রিপোর্টের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। বিধায় হাসপাতালে নমুনা দিতেও অনীহা রয়েছে। অনেকে নমুনা দেয়ার সময় ভুল ঠিকানা ব্যবহার করছেন। আবার অনেকে স্থায়ী ভাবে খুলনায় বসবাস করে সাতক্ষীরার ঠিকানা দিচ্ছেন। অনেকে শুধুমাত্র মোবাইল নম্বর দিচ্ছেন কিন্তু পুরো ঠিকানা ব্যবহার করছেন না। ফলে তাদের করোনা রির্পোট পজেটিভ আসলেও বাসা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।আবার অনেকে লক ডাউন মানছেন না। করোনা পজেটিভ ব্যক্তির বাড়ি লক ডাউন করে দেয়ার পর আর তাদের খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে না বা প্রশাসনের নজরদারি থাকছে না। যে কারনে করোনা পজেটিভ হওয়ার পরও কেউ কেউ রির্পোট ভুয়া বলে ইচ্ছামত ঘোরাফেরা করছেন। ফলে সাতক্ষীরায় সংক্রমণের হার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার ২১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৫ জন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ৩৬ জন। এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৫৩৯ জন। ২১ জুলাই পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪১৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে পৌঁছেছে। প্রাপ্ত রির্পোটের মধ্যে ৫৩৯ জনের করোনা পজিটিভ ও বাকীদের সব নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত জেলায় ২৪৯ জন সুস্থ হয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে আতংক থাকলেও স্বাস্থ্য বিধি মানতে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে হাট বাজার গুলোতে মোটেই স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ লোক মুখে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। হোটেল রেস্তোরা গুলো চলছে আগের মতই। যে কারণে আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ১২ জুলাই পর্যন্ত ওই সপ্তাহে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার সাতক্ষীরা জেলায় সর্বোচ্চ ছিল। এদিন জেলায় রেকর্ড ৪৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ফলে একমাত্র জেলা যেখানে সাপ্তাহিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হার শতভাগের বেশি ছিল। ১২ জুলাইয়ের পর ২১ জুলাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। গত ২২ জুন সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০০ জন। এক মাসের ব্যবধানে ২১ জুলাই তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৩৯ জনে।

সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, ‘প্রথম দিকে সাতক্ষীরায় কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন প্রশাসন বেশ তৎপর ছিল। কিন্তু এখন এ বিষয়ে এক ধরনের ঔদাসীন্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। কেউ কোন দায় নিচ্ছেন না, সবাই নিজেদের সাফল্যের গল্প শোনাচ্ছেন। অথচ আমরা শুরু থেকেই বলে আসছিলাম যে, স্থানীয় সরকারের যারা ইউপি সদস্য আছেন, যাদের সাথে গ্রামের সাধারণ মানুষদের যোগাযোগ আছে তাদেরকেসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ যারা কমিউনিটি লিডার আছেন তাদেরকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে কমিটি করে দিতে। এতে করে মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে বোঝানো যেমন সহজ হত, তেমনি কোন বাড়িতে কে অসুস্থ হচ্ছেন বা কার কি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে তা জানা যেত। কিন্তু সময়মত তা না করে আমলাতান্ত্রিকভাবে সংক্রমণ মোকাবিলায় হাস্যকর সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হলে যা মানুষকে মানানো যায়নি।’

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত বলেন, ‘বর্তমান মৌসুমে জ্বর, সর্দি, কাশি একটু বেশি হয়ে থাকে। সাতক্ষীরায় এত বেশি আক্রান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নারায়নগঞ্জ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসার ব্যক্তিদের দ্বারা সাতক্ষীরায় কমিউনিটি সংক্রমণটা ঘটেছে। আমাদের সচেতনতার অভাবের কারণেই বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত পরিবারের লোকজনও এ বিষয়ে উদাসীন। নার্স, সরকারিজীবিসহ অনেকেই আমাকে ফোন করে বলেন, আমার বাড়িতে একজন করোনা রোগী রয়েছে দয়া করে লকডাউন করবেন না। লকডাউন করলে তো ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। বরং ওই পরিবারটি সুরক্ষিত থাকবে পাশাপাশি অন্যদের আক্রান্তের সুযোগ থাকবে না। মানুষ সচেতন না হলে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে আটকানো সম্ভব না। যেমন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, কিছু সময় পর পর হাতে সাবান দেওয়া। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক কমিটি করা প্রয়োজন। তাহলে হয়তো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!