সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ ফেব্রুয়ারি তাদের মৃত্যু হয়। এনিয়ে জেলায় ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯১ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মোট ৮১৯ জন। তবে কমেছে সংক্রমনের হার।
করোনা উপসর্গে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরা সদও উপজেলার দহখোলা গ্রামের নবাব আলীর স্ত্রী সফুরা খাতুন (৩০), খুলনার পাইকগাছা উপজেলার হাউলিয়া গ্রামের মৃত মাকফিরাতুর রহমানের ছেলে মোঃ মশিয়ার রহমান (৫৫), সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলকার মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে মোঃ মুজিবর রহমান (৭৮), শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের মৃত তছির উদ্দীন গাজীর ছেলে মোঃ নুর মোহাম্মাদ গাজী (৬৫) ও আশাশুনি উপজেলার বসুখালী গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইয়াসিন (১৫)। এছাড়া করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা আক্রান্ত হয়ে ও করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিভিন্ন সময় তারা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ ফেব্রুয়ারি ভোর রাত ১২ টা থেকে রাত ৭ টার মধ্যে বিভিন্ন সময় তাদের মৃত্যু হয়।
এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরায় নতুন করে আরো ২৪ জন করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। এসময় র্যাপিড এন্টিজেন কীট ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে মোট ১৪৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর আগের দিন আগে শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
সামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে মোট ৪৪ জন রোগী । এর মধ্যে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ ও বাকি ৩১ জন সন্দেহজনক (সাসপেক্টেড)। নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি আছে ৪ জন।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন সাফায়াত জানান, গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা সামেক হাসপাতালের আরটি পিসিআর ল্যাবে ৭৬ টি নমুনা পরীক্ষা করে ১০ জনের করোনা সনাক্ত হয়। এছাড়া সদর হাসপাতাল সহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে র্যাপিড এন্টিজেন কীটে ৭০ টি নমুনা পরীক্ষা করে আরো ১৪ জনের করোনা সনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। জেলায় গড় সংক্রমনের হার ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ।
তিনি আরো বলেন, জেলায় ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭ হাজার ৭২৯ জন। জেলায় মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৬৭ জন। গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছে ৪২ জন। বর্তমানে জেলায় করোনা রোগী রয়েছে ৫৭১ জন। এরমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর সংখ্যা ১৩ জন। বাড়িতে হোম আইসোলেশনে আছেন ৫৫৮ জন। জেলায় প্রথম থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি প্রর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৯১ জন এবং উপসর্গে মারা গেছেন আরো ৮১৯ জন।
সিভিল সার্জন আরো জানান, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৫১ জন এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। আর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯৮ হাজার ৯৯২ জন। এদিকে সেনোফর্ম ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৩৮৯ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৮ লক্ষ ১৫ হাজার ৩৪৮ জন।
ফাইজার ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৪৯ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ২৫ হাজার ২৮৬ জন। সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন ১ লক্ষ ২৫ হাজার ৬৫৭ জন। সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ২৮ হাজার ৪৭৭ জন। এছাড়া এস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ২৯ হাজার ২৭২ জন এবং ফাইজার ভ্যাকসিনের বুষ্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন ৯১ জন।
তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা জেলায় এ পর্যন্ত প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ১৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৫৪৬ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে ৯ লক্ষ ৬৮ হাজার ১০৩ জনকে এবং তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ২৯ হাজার ৩৬৩ জনে।
খুলনা গেজেট/এনএম