খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

সাতক্ষীরায় করোনা উপসর্গে নারীসহ তিনজনের মৃত্যু, চলছে লকডাউন

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

করোনা উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও সদর হাসপাতালে এক নারীসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার ভোর রাত আড়াই টা থেকে শনিবার ভোর রাত ২ টার মধ্যে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সোনাতলা গ্রামের আব্দুস সাত্তার গাজীর স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৪৫), সাতক্ষীরা পৌর শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মৃত ইউসুফ আলী সরদারের ছেলে মোঃ আশরাফ হোসেন সরদার (৮৭) ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের মৃত আহাদ আলী গাজীর ছেলে সামছুর রহমান (৩৫)।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ করোনার নানা উপসর্গ নিয়ে গত ২৮ মে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে ভর্তি হন কালিগঞ্জের সোনাতলা গ্রামের সেলিনা খাতুন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোর রাত আড়াই টার দিকে তিনি মারা যান।

এদিকে একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে গত ২ জুন বুধবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে ভর্তি হন সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়া এলাকার মোঃ আশরাফ হোসেন সরদার। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে তিনি মারা যান।

আবার জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে শনিবার (৫ জুন) ভোর রাত ১টার দিকে সদর হাসপাতালের করোনা কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হন শ্যামনগরের কৈখালী গ্রামের সামছুর রহমান। ভর্তির মাত্র ১ ঘন্টা পর ভোর রাত ২টার দিকে তিনি মারা যান।

এনিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জুন পর্যন্ত মারা গেছে অন্ততঃ ৫০ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন কমপক্ষে ২১৫ জন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খুদা ও সিভিল সার্জন ডাঃ হুসেন সাফায়েত পৃথকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে স্বাস্থবিধি মেনে তাদের মরদেহ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির মুখে সাতক্ষীরা জেলায় শনিবার থেকে সপ্তাহব্যাপী লকডাউন শুরু হয়েছে। আগামী ১১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত এই লকডাউনের মেয়াদ থাকবে। লকডাউন চলাকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের বাধা নিষেধ মেনে চলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। একই সময় শহরে ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুলিশ টহলে থাকবে।

সাতদিনের লকডাউনের প্রথম দিনে সাতক্ষীরায় কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। সকাল থেকে শহরে মানুষের যাতায়াত অন্যদিনের চেয়ে খুবই কম লক্ষ্য করা গেছে। নিত্যপণ্যের দোকানপাট ছাড়া অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে শহরের কিছু কিছু ছোট দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে। জেলা শহরের চারিপাশ ঘিরে রেখেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে শহরের বিভিন্ন সড়কে খুবই স্বল্প পরিসরে চলছে ব্যাটারি ভ্যান, ইজিবাইক, টেমম্পু, মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য ছোট ছোট যানবাহন। দূরপাল্লার কোন যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। সাতক্ষীরা-খুলনা, সাতক্ষীরা-যশোর ও সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ মহাসড়কসহ সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল চলছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি টিম মাঠে রয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে চলছে বিজিবির টহল। লকডাউনে শহর এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রবনতা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ১২টা ১মিনিট থেকে জেলাব্যাপি লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউন চলাকালে সাতক্ষীরা জেলার সর্বত্র কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। তবে, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। ঔষধের দোকান ব্যতীত সকল ধরণের দোকানপাট, শপিংমলসমূহ বন্ধ থাকবে। সাপ্তাহিক হাট ও গরুর হাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকানপাট, খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁ কেবল খাদ্য বিক্রয় সরবরাহ করা যাবে। প্রয়োজন ব্যতীত কেউ এসব স্থানে যেতে ও জনসমাগম করতে পারবে না।

গত বৃহস্পতিবার (৩ জুন) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক এক বৈঠকে এই লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। জেলায় লকডাউন ঘোষনার পর শুক্রবার দিনভর শহরে মানুষের চলাচল ছিল চোখে পড়ার মত। শহরের বাজার গুলোতে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়। তারা সপ্তাহব্যাপী বাজার সওদা করার চেষ্টা করেছেন। লকডাউন চলাকালে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনাবেচার সুযোগ থাকবে।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, করোনা পজিটিভ নিয়ে সাতক্ষীরায় ২৪৫ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ও কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৯ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!