পুলিশ ইন্সপেক্টর পদের অপব্যবহার, ক্ষমতার দাপট আর মিথ্যে মামলার ভয় দেখিয়ে আশরাফ হোসেন আশু নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মালিকানাধীন ৩৬ বিঘা জমির মৎস্য প্রকল্প জবরদখল, উৎপাদিত প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার সাবেক কোর্ট ইন্সপেক্টর অমল রায়ের বিরুদ্ধে। একই সাথে সেখানে থাকা মৎস্য চাষাবাদ ও পোনা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত আরো প্রায় ২৫ লাখ টাকার সম্পদ বেআইনীভাবে ভোগদখল এবং লুন্ঠনের অভিযোগ মিলেছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলে প্রায় দুইমাস আগে অভিযুক্ত অমল রায়কে কোর্ট ইন্সপেক্টরের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত রয়েছেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে থাকা এসব অভিযোগের তদন্ত করে ইতিমধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করেছেন দেবহাটা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার এসএম জামিল আহমেদ এবং রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পৃথক তদন্ত টিমের সদস্যরা। তাছাড়া ওই জমি জবরদখলের ঘটনায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে কয়েকমাস আগে অমল রায়কে নিয়ে শালিসও করেছেন জেলা পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। শালিসে জবরদখলকৃত জমি ও মাছের প্রকল্পটি মুল মালিকদের অনুকূলে ফেরত দেয়াসহ নুন্যতম ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই প্রজেক্টটিতে মালিকদের মাছ ছাড়ার ২২ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিতে অমল রায়কে নির্দেশ দেয়া হলেও তা অমান্য করে প্রায় দেড় কোটি টাকা মুল্যের মৎস্য প্রকল্পটি লুটেপুটে খেয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গিয়েছেন অমল রায়।
জানা যায়, টানা তিনবছর পর সম্প্রতি প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ওই সম্পত্তির মালিকপক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত লাগোয়া চরবালিথা গ্রামে জবরদখলকৃত ৩৬ বিঘা সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে যাওয়ার আগে অমল রায় ও তার লোকজন ৩৬ বিঘা জমির প্রকল্পটিতে শেষবারের মতো জাল টেনে কয়েক লক্ষ টাকার মাছ এবং সেখানে থাকা মালিকপক্ষের আরো প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছের পোনা উৎপাদনে ব্যবহৃত মালামাল ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ মালিকপক্ষের। এমনকি তারা দখল ছাড়ার পূর্বে প্রায় প্রত্যেকটি পুকুরে বিষ প্রয়োগেরও অভিযোগ তুলেছেন সাবেক কোর্ট ইন্সপেক্টর অমল রায়ের বিরুদ্ধে।
বৃহষ্পতিবার (২৩ ডেিসম্বর) ৩৬ বিঘা ওই সম্পত্তির মুল মালিক দেবহাটার কুলিয়াস্থ আশু মার্কেটের মালিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন আশুর পক্ষে জমির দখল বুঝে নিয়েছেন তার নিকটাত্মীয় সাজ্জাদুল ইসলাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ হোসেন আশু জানান, ২০১৬ সালে তার মালিকানাধীন চরবালিথা মৌজার ১০.২৩ একর জমি মৎস্য প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য বার্ষিক ৮ লাখ টাকা চুক্তিতে খুলনার ব্যবসায়ী তৈয়বুর রহমানের কাছে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য লীজ দেন তিনি। পরবর্তীতে সেখানে লীজগ্রহীতা খুলনার তৈয়বুর রহমান, খলিলুর রহমান, সাতক্ষীরার শফিকুল ইসলাম শফি, রিয়াজুল ইসলাম (তাঁরা মিয়া), আজিম হোসেন সুমনসহ কয়েকজন মিলে সেখানে নয়টি পুকুর খনন এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযুক্ত করে একটি অধা নিবিড় মৎস্য প্রকল্প স্থাপন করে। যেখানে মাছের চাষাবাদ ও পোনা উৎপাদন হতো। ২০১৯ সালে ওই প্রকল্পটি থেকে লীজ গ্রহীতাদের বিতাড়িত করে কোর্ট ইন্সপেক্টর অমল রায় তার মালিকানাধীন সমূদয় জমি জবরদখল করে নেন এবং জোর করে গত কয়েক বছর ধরে সেখানে উৎপাদিত মাছ ও অন্যান্য সম্পদ ভোগদখল বা লুন্ঠন করে আসছিলেন বলেও অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আশু।
জমির লীজ গ্রহীতা ও প্রকল্পের মালিকদের পক্ষে সাতক্ষীরার সাব্বির মটরসের মালিক শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, প্রকল্পটি তৈরী ও সেখানে মাছ ছাড়ার পর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোর্ট ইন্সপেক্টর অমল রায় সৌখিন মাছ শিকারের কথা বলে সেখানে যান। মাছ শিকার শেষে তিনি ওই প্রজেক্টের বিষয়ে সবকিছু শুনে সেখানে পার্টনারশিপ হওয়ার ইচ্ছে পোষন করেন। যেহেতু তিনি একজন ওসি, তাই আমরা তাকে এড়িয়ে যেতে পারিনি। দেড় কোটি টাকা মুল্যের প্রজেক্টে তিনি ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন এবং বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কয়েকমাস যেতে না যেতেই অমল রায়ের লুকানো চেহারা প্রকাশ পায়। তিনি জেলার বিভিন্ন দাগী আসামীদের দিয়ে আমাদের প্রজেক্ট থেকে চলে যেতে হুমকি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে বারবার তিনি মিথ্যে মামলা ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিতে থাকলে বাধ্য হয়ে প্রাণভয়ে আমরা প্রকল্পটি থেকে চলে আসি। কিন্তু জমির মালিককে আমাদের লীজের টাকা প্রতিবছর পরিশোধ করতে হয়েছে এবং খুলনার পার্টনাররাও আমাদের থেকে টাকা উসুল করে নিয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের হা হয়ে নিজেদের পকেট থেকে জমির মালিককে লীজের টাকা সহ অন্যান্য পার্টনারদের টাকা দিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়েছি। এঘটনায় তারা অমল রায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক কোর্ট ইন্সপেক্টর অমল রায়ের ব্যাক্তিগত মোবাইলে (০১৭১২৫৯৯৩৬৩) বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ফোন করিয়ে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার বিষয়ে বলেছেন অমল রায়।