সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর এবং শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ও কাশিমাড়ি ইউনিয়নে যাতায়াতের প্রধান সড়কের (পাকা রাস্তার) উপর দিয়ে এখনো প্রবাহিত হচ্ছে নদীর পানির স্রোত। সড়কের উপর দিয়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়া অব্যাহত থাকায় ভেঙ্গে চলাচলের অনুপোযোগি হয়ে পড়েছে এলাকার যাতায়াতের প্রধান প্রধান সড়ক। নৌকায় চড়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে। এদিকে এখনো পানি না নামায় অনেকে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও সদর ইউনিয়ন এবং শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়ন। এর মধ্যে প্রতাপনগরের চাকলা, দিঘলারাটি, সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, প্রতাপনগর, কল্যানপুর, নাকনা, লষ্কারি খাজরা, নয়াশ্রীপুর, হরিশখালি, হরিখালী, হিজলিয়া, কোলা, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালি, মাড়িয়ালা, কলিমাখালী, নাকতাড়া, বকচর, লাঙ্গলদাড়িয়া, রাধারআটি, বুড়খারআটি, মহিষকুড়, উত্তর পুইজালা, দক্ষিণ পুইজালা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া, দয়ারঘাট, গাইয়াখালী, ঠাকুরাবাদ, দাশেরাটি, কমলাপুর, শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, গাবুরা ও খলসিখালী এবং কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ দুই উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। সরকারি ভাবে চাল দেয়া হলেও অনেকে রান্না করে খেতে পারছে না।
স্থানীয়রা জানান, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়নের বড় একটি অংশের লোকালয়ে গত তিন মাস ধরে জোয়ার-ভাটা চলে আসছে। প্রতাপনগর ইউনিয়নের চাকলা ও কুড়িকাউনিয়া এবং শ্রীউলা ইউনয়নের হাজরাখালী পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে এতই গভীর হয়েছে যা সংস্কার করা এতদিন সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিয়েও ক্ষতিগ্রস্থ ওইসব বাঁধ সংষ্কার করতে পারেনি।
ফলে জোয়ার-ভাটা বইছে লোকালয়ে ও বাড়ির উঠানে। ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে এখনো জোয়ার ভাটা অব্যহত থাকায় এব এলাকার গ্রামীন সড়কের পাশাপাশি পাকা সড়ক গুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। কোন কোন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করাও যাচ্ছে না। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হলে নৌকায় চড়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে।
এদিকে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছে জেলার লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানি না কমায় মানবেতর জীবন যাপন করছে দুর্গত এলাকার মানুষ। কোথাও শুকনো জায়গা নেই। গরু-ছাগল রাখতে হচ্ছে ঘরের মাচানের উপর। মাচানের উপরে চুলা পেতে কোন রকমে রান্না করে এক বেলা খাওয়া হচ্ছে। আবার কোন বেলায় শুধু পানি খেয়ে কাটিয়ে দিতে হচ্ছে বানভাসি মানুষের। একই সাথে দূর্গত এলাকায় ভেঙ্গে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে বিশাল জনগোষ্ঠী। দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। এমন পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকার অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার শেষ হতে না হতেই ফের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সব ভেসে গেছে। মানুষ নি:স্ব হয়ে পড়েছে। এখানকার মানুষ খুবই কষ্টের মধ্যে জীবন যাপন করছে। আমার ইউনিয়নে একটি যাতায়াতের রাস্তাও ভালো নেই। নৌকায় চড়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে হচ্ছে। একটি মানুষ মারা গেলে তার দাফন করার মতোবা সৎকার করার মতো জায়গা নেই।
তিনি জানান, ইউনিয়নের ২১টি গ্রামের মধ্যে ২০টি সম্পূর্ণ তলিয়ে রয়েছে। খুব দ্রুত যদি বাঁধগুলো সংস্কার করা নায় হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষ নদ-খোলপেটুয়া নদীর সাথে মিশে যাবে পতাপনগর ইউনিয়ন। তিনি বলেন, ‘আমার ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ইতিমধ্যে দূর্গতদের জন্য ২০০ মেট্রিকটন চাউল ও নগদ ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে রবিবার ও সোমবার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ প্রতাপনগর এলাকায় গিয়েছি। পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত। সেখানকার মানুষ খুব কষ্টে আছে। সোমবার ক্ষত্রিগস্ত এক হাজার মানুষের মাঝে ১০ টন চাউল বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার আরো ১৫ টন চাউল বিতরণ করা হবে। তিনি আরো জানান, দুর্গত এলাকায় বেঁড়িবাধ সংস্কারে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম