সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের তিনটিতে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন চার নারী প্রার্থী। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার চার নারী প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার বিষয়টি এখন জেলার সাধারণ ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক চারজন নারী প্রার্থী সাতক্ষীরার সংসদীয় আসন গুলোতে সরাসরি প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে নেমেছে।
আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী প্রার্থীরা হলেন, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামে সাতক্ষীরার নারীদের সংগঠিত করার কাজে জেলাব্যাপি দাপিয়ে বেড়ানো নারী নেত্রী লায়লা পারভীন সেঁজুতি, জেলার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ঠ সংগীত শিল্পী শামীমা পারভীন রত্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক তুখোড় নেত্রী শেখ মাসুদা খানম মেধা এবং জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন প্রার্থী মোছাঃ সাফিয়া পারভীন কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
লায়লা পারভীন সেঁজুতি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তালা উপজেলা কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক, সম্প্রীতি বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তালার নগরঘাটা ইউনিয়ন শাখার মহিলা সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
লায়লা পারভীন সেঁজুতি ১৯৯৬ সাল থেকে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় নিয়েকে নিয়োজিত করেন এবং সেই সময় থেকে তালার বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রীসহ বি.এড সম্পন্ন করেছেন। তিনি সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসন থেকে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যার্শী।
শামীমা পারভীন রত্না সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি অধ্যুষিত সাতক্ষীরায় সাংস্কৃতিক জাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সাতক্ষীরা পিএন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্কুল জীবন থেকেই সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়ে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৫ সালে শিশুদের সৃজনশীলতাকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বর্ণমালা একাডেমী এবং উক্ত সংগঠনের তিনি সভাপতি। তিনি বর্তমানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমী সাতক্ষীরার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ বেতার খুলনার তালিকাভুক্ত সঙ্গীত শিল্পী।
শামীমা পারভীন রত্না ভারত-বাংলাদেশ শিল্পী সমন্বয় পরিষদ এর পক্ষ থেকে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি ভারত থেকে সম্মাননা প্রাপ্ত এবং ভারতের বেহালাতে লোক সাংস্কৃতিক উৎসবে সম্মাননাপ্রাপ্ত। তিনি সাতক্ষীরা-২ (সদর) আসন থেকে আ’লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
জাপা নেত্রী মোছাঃ সাফিয়া পারভীন কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। পিতা একই ইউনিয়নের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান কে.এম. মোশাররফ হোসেন দুষ্কৃতিকারীদের বোমা হামলায় নিহত হন। পরবর্তীতে উপনির্বাচনে মাতা মোছাঃ আকলিমা খাতুন উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মেয়াদ শেষে পরবর্তী নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
তিনি জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় মহিলা পাটির সভানেত্রী। সাফিয়া পারভীন রূপসী বাংলা নামক একটি সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও সহিলুদ্দীন এন্ড করিমুন্নেছা শিশু একাডেমীর পরিচালক ও সিদ্দিকীয়া মোশাররফিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান। সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আংশিক) আসন থেকে জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
আ’লীগ নেত্রী শেখ মাসুদা খানম মেধা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। তিনি ২০০০ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সদস্য ও পরে অর্থ সম্পাদিকা পদে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে হাতে খড়ি। ১৯৯৬ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ছাত্র-ছাত্রীর বিপুল সমর্থন নিয়ে ২০০০ সালের ২৫ নভেম্বর রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় শ্বশুর বাড়ি হওয়ায় অত্র এলাকায় স্কুল-কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই বিতরণ করেন, যাতে এ এলাকার নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারে। রোকেয়া হল শাখার সাবেক সভাপতি ও গোপালগঞ্জের সন্তান হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে শতভাগ অনুসরণ করে শ্যামনগর-কালিগঞ্জ এলাকায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আংশিক) আসন থেকে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।
খুলনা গেজেট/ এএজে