খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট
৪০ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ

সাতক্ষীরার খেজুরডাঙ্গা আরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ বোর্ড বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গা আরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে পাতানো বোর্ড বন্ধ করা হয়েছে। সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের তদারকিতে শুক্রবার সকাল ১০টায় দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০ লাখ টাকা অর্থ বাণিজ্যের এই নিয়োগ বোর্ড বসানো হচ্ছিল। খবর পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এই নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে দিয়েছেন।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কিছু অচেনা লোকের আনাগোনা দেখে স্থানীয়রা বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। খবর পেয়ে সেখানে যাওয়া মাত্র ওই বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণীকক্ষে দু’নারীসহ ১১জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের কাছে পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রবেশপত্র ছিল। তবে তারা কোন বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন তা তাৎক্ষণিক কেউ মুখ খোলেননি।

সেখানকার দায়িত্বরত জনৈক হাবিবুর রহমান নিজেকে খেজুরডাঙ্গা আরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করে বলেন, এখানে একটা মিটিং হচ্ছে। কিসের মিটিং হচ্ছে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ইদ্রিস আলীর কাছে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ইদ্রিস আলী বলেন সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে একজনের স্থায়ীকরণ, একজন প্রহরী ও একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ পরীক্ষা সেখানে অনুষ্ঠিত হবে।

তবে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিমের চাচাত ভাই। তার বোন ফারজানা আক্তার কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তিনি এমপি সাহেবের বাসার পাশেই থাকেন। তাই সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানসহ নিয়োগ বোর্ডের সকলকে ম্যানেজ করেই আগে থেকে প্রহরী পদে ও পরিচ্ছন্ন কর্মী পদে তাহমিদ ও জাহিদকে নিশ্চয়তা দিয়েই বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোরাম পূর্ণ করে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নিয়োগের ব্যাপারে স্থানীয় কাফেলা ও একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি সেখানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি কোন পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

আগে থেকে ঠিক করে রাখা সহকারি প্রধান শিক্ষক গোপীনাথপুরের দেবেন গাইন বলেন, তিনি ১৯৯৫ সালেল পহেলা জানুয়ারি থেকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত। তার বেসিক বেতন ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনি সহকারি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও অনুমোদিত না হওয়ায় সহকারি প্রধানর শিক্ষকের বেতন অনুযায়ি বেসিক ২৩ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন না। তাই সকলের সহযোগিতায় তিনি ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়ার জন্য এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তবে কোরাম পুরণের জন্য প্রধান শিক্ষকের বোন কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানা আক্তার ও বাঁশদহা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃপ্তি রানীকে আনা হয়েছে।

খেজুরডাঙ্গা গ্রামের কণ্ঠরাম সরকারের ছেলে প্রবেশ সরকার বলেন, তাকে প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবিকৃত আট লাখ টাকার পরিবর্তে ছয় লাখ টাকা নিলেও চাকুরির বয়স নেই দেখিয়ে তাকে পরীক্ষার কার্ড দেওয়া হয়নি।

খেজুরডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান সাজু বলেন, পাঁচ মাস আগে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে একজন প্রহরী নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি আদালতের শরনাপন্ন হন। মামলার কারণে ওই সময় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এখনো প্রধান শিক্ষক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে তিনজনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে ওই পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

খেজুরডাঙ্গা আরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম বলেন, পরীক্ষা হওয়ার কথা তিনি জানেন। তবে কোথায় হচ্ছে এটা তাকে অবহিত করা হয়নি। তবে এতে কোন অর্থনৈতিক লেনদেন এর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাক কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বলে নিয়োগ বোর্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সভাপতি আসতে দেরি করাতে নিয়োগ বোর্ড বাতিল করা হয়েছে। নিয়োগ বোর্ড বসাতে কোন প্রকার আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়নি। তবে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ওই পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!