শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো। কিন্তু আমরা সচারাচার যে সকল শাকসবজি খাচ্ছি সেটা কতটা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বা কতটা নিরাপদ, তা আমরা জানিনা। শাকসবজি উৎপাদনে ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক সার, কীটনাশক। কিছু কিছু সবজিতে আবার ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ মাত্রার ক্ষতিকর কীটনাশক। ফলে এ সকল শাক সবজি সংগ্রহ করার পর তা দীর্ঘ সময় ভাল থাকছে না। আবার নিরাপদ পানি দ্বারা পরিস্কার না করায় সহজে পচন ধরছে। এমনকি এসব শাক সবজি রান্না ও খাওয়ার নিরাপদ বিষয়গুলি সম্পর্কে অনেকে অবহিত নয়। এ সকল বিষয়ে উপকূলীয় এলাকার কৃষকদের জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব)।
সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগরের লবণাক্ততা এলাকায় জীববৈচিত্র্য নির্ভর কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করতে রিইব উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধূমঘাট, বংশীপুর, রমজাননগর ইউনিয়নের পাতড়াখোলা, পশ্চিম ধূমঘাট মুন্ডাপাড়াসহ অন্যান্য গ্রামে গণগবেষণা দল সৃষ্টি করে কৃষকদের জীব বৈচিত্র্য নির্ভর কৃষিতে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
গণগবেষণা দলের কৃষক বংশীপুর গ্রামের বাসিন্দা খলিলুর রহমান বলেন, রাসায়নিক কৃষি প্রচলনের আগে যে কৃষি পদ্ধতি প্রচলন ছিল তা যুগ যুগ আগে থেকে প্রকৃতি নির্ভর কৃষি ছিল। আজ যাকে আমারা জৈব প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি হিসেবে আখ্যায়িত করছি। তিনি জীববৈচিত্র্য নির্ভর কৃষিতে কৃষককে কোম্পানির হাত থেকে মুক্তি দেওয়াসহ অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের কথা বলেন। অনুরুপ কথা বলেন ধূমঘাট গ্রামের কৃষক স্বপন মন্ডল, তরুণ মুন্ডাসহ অন্যানারা।
শ্যামনগর উপজেলায় লবণ পানিতে চিংড়ী চাষ হয়ে থাকে। এর ফলে লবণ পানির প্রভাবে লবণ সহিষ্ণু জাত সবজি কৃষকরা বেশি ব্যবহার করেন। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে কৃষিতে ফসল উৎপাদন আশানুরুপ নয় বলে কৃষকরা মত প্রকাশ করেন। কৃষকরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনে মিষ্টি পানির প্রবাহ সৃষ্টির দাবী জানান। বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে পানির অভাবে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয় বলে তারা জানান। কৃষকরা সরকারি খাল গুলো দখলমুক্ত করে পুনঃখননের দাবী জানান। একই সাথে মিষ্টি পানির প্রবাহ সৃষ্টির বিষয়ে বলেন।
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের শ্যামনগরের গবেষণা সহকারী চৈতন্য কুমার দাস গণ গবেষণা দলের কৃষকদের উঠান বৈঠক করে জৈব প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দিচ্ছেন। সম্প্রতি শ্যামনগর উপজেলার ধূমঘাট ও পাতড়াখোলা গ্রামে গবেষণা দলের ঊঠান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশের ডকুমেন্টশন এন্ড ট্রেনিং অফিসার সৈয়দ নাভিদ আনজুম হাসান সহ অন্যান্যরা।
সৈয়দ নাভিদ হাসান বলেন, শ্যামনগর উপজেলা বাংলাদেশের বৃহত্তম উপজেলা উপকূলীয়। এখানে কৃষির অনেক সম্ভবনা রয়েছে। স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণির যথাযথ ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা রক্ষা, শস্যের সঙ্গী উদ্ভিদকে আগাছা বলে চিিহ্নত না করে তার যথাযথ ব্যবহার করা, স্থানীয় জলবায়ু ও মাটির উপযোগি শস্য বীজ ব্যবহার করা ও কৃষকের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি করে সবুজ বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। উপকূলীয় কৃষকদের লবণাক্ততা এলাকায় জীববৈচিত্র্য নির্ভর কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করতে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে রিইব কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া তিনি চাষাবাদের সার্বিক বিষয়ে সহযেগিতার জন্য কৃষকদের উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ রাখার কথা বলেন।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল