খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় পানি বৃদ্ধি, ঝুকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হঠাৎ করে নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের চাপে উপকূলীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ফলে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা।

খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ নং পোল্ডারের আশাশুনির বিছট গ্রামে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সোমবার (৭ আগষ্ট) সকাল নাগাদ বিছট মোড়ল বাড়ি ও সরদার বাড়ির সামনে বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে মাটি ধ্বসে পড়েছে। জোয়ার আরো বৃদ্ধি পেলে ওই দু’টি পয়েন্টের বাঁধ যে কোন মুহুর্ত্বে ভেঙে যেতে পারে। ফলে বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ওই এলাকায় বসবাসকারি জনসাধারণের মধ্যে।

বিছট গ্রামের রুহুল আমিন মোড়ল জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমের আগে বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধের সষ্কার কাজ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। মাটি কম থাকায় ঠিকাদার বাঁেধর কাছাকাছি এলাকায় গর্ত করে মাটি তুলে বাঁধের উপর দিয়েছিলেন। সে সময় গ্রামবাসী নিষেধ করার পরও ঠিকাদরের লোক কোন গুরুত্ব দেননি। বর্তমানে নদীতে জোয়ারের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাতাসে ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি ধ্বসে নিচে ওই গর্তে চলে গেছে। ফলে যে কোন মুহুর্ত্বে বিছট মোড়ল বাড়ি ও সরদার বাড়ির সামনে থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভিতরে পানি ঢুকতে পারে। তিনি দ্রুত ওই ভাঙন পয়েন্ট মেরামত করার জন্য পাউবো কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

এদিকে পূর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে শ্যামনগরে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের বেশ কয়েকপি স্থানে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার ৯নং সোরা গ্রাম সংলগ্ন চর এলাকায় এই ভাঙন দেখা দেয়। এতে করে ইতিমধ্যে গাবুরার ৫০০ মিটারের মত এলাকা জুড়ে বাঁধে ভাঙন ধরেছে। অনেক স্থানে বাঁধ ধ্বসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
গাবুরা গ্রামের হুদা মালী বলেন, বেড়িবাঁধের অবস্থা খুবই নাজুক। যে কোনো সময় ভেঙে নদীতে বিলীন হতে পারে। এলাকার মানুষ আতংকে আছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জুর হোসেন জানান, সোরা গ্রামের হাসান মালীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার জুড়ে বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরেছে। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে বড় বড় মাটির স্তুপ ও গাছপালা নদীতে চলে যাচ্ছে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম জানান, পূর্ণিমার জোয়ারে খোলপেটুয়া নদী এবং কপোতাক্ষ নদে পানি বৃদ্ধির ফলে গত তিন-চার দিন ধরে উত্তাল রয়েছে নদ-নদী। উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ার ছাড়া ৩-৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে তার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ৯ নম্বর সোরা গ্রামের হাসান মালির বাড়ি সংলগ্ন ও গাবুরার দৃষ্টিনন্দন এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, ওই এলাকায় খোলপেটুয়ার বেড়িবাঁধটি চর থেকেও খানিকটা দূরে। মূলত এই চর ভেঙে নদী ভাঙন বেড়িবাঁধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বাঁধটি খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভাঙন এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শংকা রয়েছে। স্থানীয়রা বাঁধটি মেরামতের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনই পদক্ষেপ না নিলে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। এতে করে দুর্বল বেড়িবাঁধ নিয়ে নদ-নদীর তীরবর্তী মানুষেরা ভয়ের মধ্যে রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ অনেক স্থানে দুর্বল হয়ে গেছে। এ ছাড়া আইন অমান্য করে বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলন না করে ভাঙন কবলিত এলাকার কাছের অংশ থেকে অনেকে বালু তুলছে। এ কারণে নদীতে সামান্য পানি বাড়লে এসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে।

শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদুল হক বলেন, পূর্ণিমার জোয়ার ও সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ার বৃদ্ধি পাওয়ায় গাবুরার দুটি পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছিল। সেখানে জিওব্যাগ পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরো জিও ব্যাগ পাঠানো হবে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দিন জানান, সোরা গ্রামের পাশে দৃষ্টিনন্দন এলাকার কিছুদিন আগে ভাঙন ধরেছিল। সে সময় বেশকিছু জিওব্যাগ পাঠানো হয়েছিল। যেগুলো অব্যবহৃত রয়েছে আপাতত সেগুলো দিয়ে ভাঙন রোধের কাজ চলছে। এ ছাড়া নতুন করে আরও কিছু জিওব্যাগ পাঠানো হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর লোকজন ভাঙন রোধে কাজ করছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেয়াজ তালুকদার জানান, আশাশুনির গোকুলনগর এলাকায় বাঁেধ একটি বড়ধরনের ছিদ্র দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধের সাথে নিয়ে আমরা সেটি মেরামত কেরছি। আপততঃ তার বিভাগের অধীনে কোথাও বড় ধরনের কোন সমস্যা নেই।

তিনি বলেন, আশাশুনির বিছর গ্রামে বেড়ি বাঁধের কাছাকাছি মাটি না থাকায় ঠিকাদারের কাজ করতে একটু সমস্যা হয়েছে। যে কারণে সেখানে বাঁধ সংষ্কারের সময় মাটির সংকট দেখা দিয়েছিল। তার পরও আমরা বাঁধটি সঠিকভাবে করার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। বাঁধের পাশ থেকে কমপক্ষে ৫০ ফুট এলাকা জুড়ে নদীর চর থাকার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বিছট গ্রামের ১০ ফুটও নেই। ফলে নদীতে জোয়ার বৃদ্ধি পেলে ঢেউ সরাসরি বাঁধে আঘাত হানে। আমি আগামী ২/১ দিনে মধ্যে সরেজমিনে ওই এলাকা ঘুরে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গতঃ সিডর, আইলার ও আম্পানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়া এ অঞ্চলের মানুষ এখনো পরিপূর্ণভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এরমধ্যে আবারো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ ফসলের ক্ষেত নদীর লবণপানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে তারা। এখনই ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন আবারো তছনছ হয়ে যাবে।

খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!