ঘুর্নিঝড় আম্পানের পর নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের প্রভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা এবং শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুর এলাকায় সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রয়েছে মানুষ। সেখানে মানুষের যে দুর্দশা দেখেছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আম্পান পরবর্তী সাতক্ষীরার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার রাত ৯টায় জুম কনফারেন্সে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তাফা কামাল একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আম্পানের পর সরকার মানুষের কষ্ট লাঘবে সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি ও অতি বর্ষণের কারণে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার এক হাজার মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ২৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেনাবাহিনীকেও মাঠে নামানো হয়েছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি প্রকল্পে এক হাজার কোটির টাকার অধিক বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সামগ্রিক বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে। তারপরও ব্যর্থতাগুলো কোথায় সেটি খুঁজে বের করে মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘবে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্যামনগর ও আশাশুনিতে জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। তালায় টিআরএম বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সাতক্ষীরা শহরসহ সদর উপজেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছরও এই জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে আমরা ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আমরা সফল হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, জরুরিভাবে এলাকায় পানি প্রবেশ বন্ধ করতে হবে। যারা গৃহহীন হয়ে পড়েছে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকের জন্য খাবারেরও ব্যবস্থা করতে হবে। পৌরসভার জলাবদ্ধতার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌর মেয়রকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা জরুরিভাবে পানি নিস্কাশনের যেখানে যা করা দরকার বাধাহীনভাবে সেটি করবো।’
জুম কনফারেন্সে সাংবাদিকরা বলেন, ‘আম্পানের পর বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। এলাকার সম্পদশালী ব্যক্তিরা সেখানে সহায়তা করে। জেলা প্রশাসনও চাল দিয়েছে। তিনটি পয়েন্ট ছাড়া সকল স্থানে রিং বাঁধ দেওয়া হয়। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড ইমার্জেন্সি কাজের কথা বলে বিনা টেন্ডারে ঠিকাদার নিযুক্ত করেছে ওই কাজগুলো সম্পন্ন করতে। কিন্তু সে কাজগুলো কেন হলো না, কেন বর্ষা মৌসুমের পর ইমার্জেন্সি কাজগুলো ফেলে রাখা হলো- সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।’
জুম কমফারেন্সে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, মোঃ আনিসুর রহিম, এড. আবুল কালাম আজাদ, কল্যাণ ব্যানার্জী, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, এম কামরুজ্জামান, শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, এম জিললুর রহমান, আমিনা বিলকিস ময়না, রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এনএম