সাতক্ষীরায় সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অধিকাংশ ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়াপত্র ও সরকারি লাইসেন্স ছাড়াই চলছে জেলা ও উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটা। অবাধে কাঠ পোড়ানোর কারণে এক দিকে যেমন বৃক্ষ নিধন হচ্ছে তেমনি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাতক্ষীরায় মোট ৯৬টি ইটভাটার মধ্যে ঝিকঝাক ভাটা রয়েছে ৮৩টি। সনাতনী পদ্ধতির ভাটা রয়েছে ১৩টি। এসব ভাটার মধ্যে ৬৭টি ইট ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশের ছাড়পত্রবিহীন এসব অবৈধ ইটভাটার কোন সরকারি লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র উচ্চ আদালতে একটি রিটের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর ইটভাটা মালিকরা অবৈধভাবে চালাচ্ছে এসব ইটভাটা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই কাঠ-কালি ও রাবারের টায়ার পোড়ানোর পাশাপাশি ফসলি জমির উপরের মাটি কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে ইট তৈরীর কাজে। এতে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। কোন কোন ভাটায় কয়লার সাথে কাঠ, তুষকাঠ ও টায়ার পোঁড়ানো কালি ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর ফলে কলো ধোয়ায় পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।
দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না কেউ। মাঝে মধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তর হতেগোনা দু’একটি ইট ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটা বন্ধে এখনো পর্যন্ত সাতক্ষীরাতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
এলাকাবাসী ও নাগরিক নেতৃবৃন্দ এবং পরিবেশবিদদের অভিযোগ প্রতি বছর এসব ইটভাটা থেকে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নামে ভাটাপ্রতি এক থেকে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। এ কাজে সমন্বায়কের কাজটি করে থকেন জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিকের অভিযোগ, ইটভাটা মৌসুম শুরুর সাথে সাথে তাদেরকে দিতে হয়ে মোটা অংকের টাকা।
এ বিষয় সাতক্ষীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম জানান, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে লাইসেন্স না থাকায় সদর উপজেলার বাবুলিয়া বিডি ব্রিকস ভেঙে দেওয়া হয়। এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র না থাকায় জানুয়ারি মাসে ৮টি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়। এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় কলারোয়া তামিম ব্রিকস ও কালিগঞ্জ উপজেলার রূপা ব্রিকসকে সিলগালাসহ তাদেরকে ৭ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। অবৈধ ইটভাটা মালিকদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান এগুলো কমন কথা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহম্মদ হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের জানান, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লাইসেন্স ও পরিবেশের কাগজপত্র না থাকায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানাসহ ভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।