খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি ৬৫ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, আদায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা

সাতক্ষীরায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা 

সাতক্ষীরায় মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে। রাখি করার জন্য মজুদ শুরু হওয়ায় চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়িদের। তবে অধিক মুনাফা লাভের আশায় সরবরাহ কমের অজুহাতে ব্যবসায়িরা কারসাজি করে দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ফলে হঠাত করে পেঁয়াজের মত একটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড়বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা গেছে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। অথচ গত শনিবার (১২ এপ্রিল) পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা কেজি এবং খুচরা বাজারে দাম ছিল ৪০ টাকা কেজি। এসময় দেশি শুকসারি পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ২৮ টাকা কেজি। যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে। একই সাথে কেজিতে থেকে ১০ টাকা বেড়েছে রসুনের দাম।
গত শনিবার খুচরা বাজার থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ কিনেছিলেন শহরের মুনজিতপুর এলাকার ভ্যানচালক নওশের আলী। চলতি সপ্তাহের বৃহম্পতিবার একই পেঁয়াজ ৫৫ টাকা কেজি দরে কিনেছেন। মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নওশের আলী। তিনি বলেন, যখন (রমজানের সময়) পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা ছিল তখন বাড়েনি। এখন কৃষকের ক্ষেত থেকে নতৃন পেঁয়াজ উঠছে অথচ এখন দাম বাড়তির দিকে। এখানে নিশ্চয় ব্যবসায়িদের কারসাজি আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে জিনিসপত্রের দাম কমেই বাড়ছে। এই সপ্তাহে চাল-ডাল, তেল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মাছ ও মুরগিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা।

বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমের অজুহাতে ৫/৬ দিনের ব্যবধানে সাতক্ষীরায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা। হঠাৎ দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। সরবরাহ এমন থাকলে দাম কমার সম্ভাবনা নেই, আরো বাড়তে পারে। তবে ভারত থেকে আমদানি শুরু হলে দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শহরের বাটকেখালী এলাকার মো. সাইফুল ইসলাম বাবু বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে খুচরা বাজার থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে। এতো দাম বাড়লে সাধারণ গরিব মানুষ কিভাবে খাবে। কিভাবে তারা সংসার চালাবো? সারাদিন ভ্যান চালিয়ে তারা পায় ৩০০-৪০০ টাকা। বাজার করতে আসলে যে দাম, তাতে একটা কিনলে আরেকটা কেনার টাকা থাকে না তাদের।

একই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা পলাশপোল এলাকার গৃহবধূ সিরাজুম মনিরা বলেন, ‘গত শনিবার পেঁয়াজ কিনলাম ৪০ টাকায়। বৃহস্পতিবার কিনতে এসে দেখি ভালোটা ৫৫ আর একটু নিম্নমানেরটার কেজি ৫০ টাকা হয়ে গেছে। এতো দাম দিয়ে কেনার সামর্থ্য তো সবার থাকে না। দাম ৩০-৩৫ টাকা থাকলে সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে।

সুলতানপুর বড়বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ি আব্দুল আজিজ জানান, ভারত থেকে আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে দেশি পেঁয়াজ দিয়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো হচ্ছিল। এই অবস্থায় গত কয়েকদিনে হঠাৎ করে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া পেঁয়াজ এখন রাখি করার সময় হওয়ায় অনেক কৃষকরা বাড়িতে ও ব্যবসায়িরা নিজেদের গুদামে পেঁয়াজ মজুদ শুরু করায় বাজারের সরবরাহ কমে গেছে বলে মনে হয়। এজন্য চাহিদার তুলনায় হঠাৎ করে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে আবার দাম কমে যাবে বলে জানান ওই পেঁয়াজ ব্যবসায়ি।

বাজারে শাকসবজি কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম বলেন, নতুন করে তেল ও চালের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে মুরগি, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম। নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। এতে করে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ, কেউ বাজার মনিটরিং করছে কিনা, করলে কীভাবে করছে, তা আমাদের জানা নেই। দাম বাড়ায় সব মানুষ ক্ষুব্ধ। এখন তো কৃষকের ঘরে তেমন পেঁয়াজ নেই, সব মজুতদারদের গুদামে সংরক্ষিত আছে। মজুতদাররাই ইচ্ছেকৃতভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজার মনিটরিং করা দরকার সংশ্লিষ্টদের। সেইসঙ্গে যারা মজুত করে দাম বাড়াচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিলে বাজার স্থিতিশীল হবে না।

পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়েছে কেন জানতে চাইলে বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা আনোয়া হোসেন বলেন, গত সপ্তাহে দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। চলতি সপ্তাহে বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। এর মূল কারণ সরবরাহ কম। যত দিন যাচ্ছে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে। এছাড়া ভারত থেকে এখন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আমরা আড়ৎ থেকে কেনার উপর কেজিতে ৪/৫ লাভ করি। সরবরাহ বাড়লে দাম কমতে পারে বলে জানা তিনি।

বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সাতক্ষীরার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান তানভীর বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বাজারের অনেক ব্যবসায়ি জানিয়েছেন বর্তমান সময়ে অনেকে পেঁয়াজ মজুদ করছে। যে করাণে হঠাৎ করে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দাম বাড়ার একটি কারন হতে পারে।

এছাড়া নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত হাট-বাজারের দোকানগুলোতে অভিযান চালানো হয়। দোকানিরা কত দামে পণ্য কিনে কত দামে বিক্রি করছেন, সেটি মনিটরিং করা হয়। কারও বিরুদ্ধে অহেতুক কোনও কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে জরিমানা করা হয়। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!